
নিজস্ব প্রতিবেদক:
অবশেষে বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলেন আতাহার হোসেন। বুধবার দুপুরে নাটোর সদর উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে এক শুনানীতে আতাহার হোসেনকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ও নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা খাতুন।
শুনানীতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জামুকা’র নাটোর সদর প্রতিনিধি হোসেন আহমেদ এবং এমপি প্রতিনিধি হাবিবুর রহমানসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, সাংবাদিকবৃন্দ, সাধারণ জনগণ। শুনানীতে তিনজন সহ মুক্তিযোদ্ধার স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আতাহার হোসেনকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইউএনও আফরোজা খাতুন।
এরআগে এই শুনানীকে ঘিরে উপজেলা চত্বরে ব্যাপক আইন-শৃংখলা বাহিনী এবং আওয়ামীলীগ এবং ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, সম্প্রতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাহার হোসেনের বিরুদ্ধে ‘অমুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে ব্রিবতকর ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মন্ত্রনালয়ে করা অভিযোগে বলা হয়, নাটোর সদর উপজেলার আটঘরিয়া এলাকায় হিন্দুদের বাড়িতে লুটকারী আতাহার হোসেনকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এনিয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল বরাবর অভিযোগও করা হয়। তারই প্রেক্ষিতে বুধবার বেলা ১১টায় সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এবিষয়ে শুনানীর দিন ধার্য্য করা হয়।
মন্ত্রনালয়ে করা অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১সালে আতাহার হোসেন তার পিতার সাথে মিলে পালপাড়ায় হিন্দুদের বাড়িতে লুটতরাজ করেন। তিনি ১৯৭১সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কোন ভাবেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন নাই। তিনি একজন অমুক্তিযোদ্ধ। এছাড়া অভিযোগে আরও বলা হয়, আতাহার হোসেন ২০০৫সালে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেট ভুক্ত হন। সে সময় তার স্থায়ী ঠিকানা ছাতনী ইউনিয়ন অন্তভুক্ত হয়। এরপর দুই দফা যাচাই-বাছাই হলেও তারা সে গেজেট সংশোধন করেনি।
জানা যায়, অভিযোগটি করেন কথিত অভিযোগকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা অতিন চন্দ্র দাস। এবিষয়ে নাটোর সদর উপজেলার ৪নং লক্ষীপুর খোলাবাড়িয়া মুক্তিযোদ্ধা ইউনিয়নের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহীম মিয়াও একই বিষয়ে প্রত্যয়ন দেন। শুনানীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা অতিন চন্দ্র দাস স্বাক্ষ্য প্রদান করেন।
যদিও শুনানীর সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা অতিন চন্দ্র দাস অভিযোগ ও প্রত্যয়ন করার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তারা উভয়েই জানান, তাদের স্বাক্ষর জাল করে কে বা কাহারা এমনটি করেছেন সেটা তাদের জানা নেই।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাহার হোসেনের ছেলে অধ্যাপক তরিকুল ইসলাম জানান, এলাকার কিছু স্বার্থন্বেষী মহল তাদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিতে না পারায় তারা মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাদেরকে হয়রানী করার চেষ্টা করেছে। আজ সত্যিটা প্রমাণ হয়ে গেল, আমার বাবা একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা।
সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ও ইউএনও আফরোজা খাতুন জানান, শুনানীতে নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে স্বাক্ষীদ্বয় ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধার মতামতের ভিত্তিতেই আতাহার হোসেন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছেন। এই সিদ্ধান্তে সকলেই সন্তুষ্ট।
এর আগে বিষয়টি নিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে স্বাক্ষীদের ম্যানেজ করা হয়েছে বলে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে জোর গুঞ্জণ উঠে।
