নাজমুল হাসান, বিশেষ প্রতিবেদক:
নাটোরে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন। ইতিমধ্যে জেলাটিতে করোনা সংক্রমন উদ্বেগজনক ভাবে ছড়িয়েছে। তবুও মানুষের মাঝে নেই স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবনতা। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো করোনা রোগীর চিকিৎসা সেবার অন্যতম স্থান সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটের চিত্র দেখলে আঁতকে উঠতে হয়।

স্বাস্থ্যবিধি মানার উদাসিনতা রোগীর স্বজনদের মাঝে। ফলে এখান থেকেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। ইতিমধ্যে হাসপাতালটির আবাসিক মেডিকেল অফিসার, চিকিৎসক, নার্স, আয়াসহ ১৭ জন আক্রান্ত হলেও কর্তৃপক্ষের নেই কোনও মাথাব্যথা।

নাটোর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডের সামনে গিয়ে দেখা যায়, রোগীর স্বজনরা কোনও বাধা ছাড়াই অনায়াসে ঢুকে যাচ্ছেন রেডজোনে। এমনকি মাস্ক না পড়েই অনায়াসে করোনা রোগীর সংস্পর্শে যাচ্ছেন তারা। যেখানে নিয়ম না মেনে করোনা রোগীর সংস্পর্শে গেলে যে কোনও সময় সংক্রমনের ঝুঁকি রয়েছে। সেখানে সাধারণ ওয়ার্ডের মতই রোগীর স্বজনদের ভীড়। নেই শারীরিক দুরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবনতা। অনেক রোগীর স্বজন করোনা ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে কেনাকাটা সেরে আবার ফিরেছেন ওয়ার্ডে। রোগীর স্বজনদের আছে নানান অযৌক্তিক কথাবার্তাও।

করোনা ওয়ার্ডে মাস্ক ছাড়াই প্রবেশ করা এক যুবককে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, তার বাবা করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধিন রয়েছেন। সারাদিন মাস্ক পড়ে থাকতে বিরক্তি লাগে। তাই মাস্ক খুলে রেখেছেন। এখন ভাগ্যে যা হবার তাই হবে।

কেনা কাটা সেরে বাজার থেকে ফেরা এক নারী জানান, মায়ের চাইতে তো আর করোনা শক্তিশালি নয়। করোনা ওয়ার্ড থেকে বেড়িয়ে বাজার যাওয়ায় অন্যদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাবে এমন প্রশ্নে কেনই জবাব দিতে পারেননি তিনি।

করোনা ওয়ার্ডে দায়িত্বরত নার্স ও তাদের সহযোগিরা জানান, রোগীর স্বজনদের অবাধ যাতায়াতের ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত করোনা ওয়ার্ডে বিধিনিষেধ কার্যকরের দাবী জানান তারা।

মেডিসিন বিষয়ক চিকিৎসক ডাঃ আমিনুল ইসলাম জানান, আইসোলেশন ওয়ার্ডে রোগীর স্বজনরা যদি অবাধে যাতায়াত করে তবে তারা আক্রান্ত হয়ে করোনা ভাইরাসের জীবানু বহন করবেন। এছাড়া জীবানু বহনকারীরা বাইরে চলাফেরা করলে শহর ও গ্রামের অন্যদেরও স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাবে। এজন্য করোনা ওয়ার্ডে রোগীর স্বজনদের চলাচল নিষিদ্ধ করা উচিত।

তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, নাটোর সদর হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডের নিরাপত্তা চরমভাবে বিগ্নিত হয়েছে। এতে রোগীর স্বজনসহ ডাক্তার নার্সরাও ১৭জন আক্রান্ত হয়েছেন। এটা খুবই বিপদজনক একটা ঘটনা। দ্রুত চিকিৎসক, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বিশেষ ভুমিকা নিয়ে করোনা ওয়ার্ডকে সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করার আহবান জানান তিনি।

নাটোর সদর হাসপাতালের সহকারি পরিচালক পরিতোষ কুমার রায় জানান, সবাইকে সচেতন হতে হবে। বার বার নিষেধ করা সত্বেও রোগীর স্বজনরা কথা শুনছেন না। করোনা ওয়ার্ডের স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, করোনা ওয়ার্ডে সবাই যেন যাতায়াত করতে না পারে সেজন্য মুল গেইট দুইজনকে রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরপর থেকে থেকে কেউ স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। করোনা ওয়ার্ডে কোনও অনিয়ম মেনে নেয়া হবে না।

Previous article৪১ সাল নাগাদ ৫ লক্ষ তরুণ তরুণীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে-প্রতিমন্ত্রী পলক
Next articleলেখক সুজিত সরকারকে এমপি শিমুলের হুমকির সত্যতা পায়নি পুলিশ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here