
মাহবুব হোসেন:
১৯৬৭ থেকে ৬৯ সালে রিভিশনাল সেটেলমেন্ট (আরএস) রেকর্ড করে সরকার। সে সময় সাধারণ মানুষের পানির চাহিদা মেটানোর জন্য পুকুরকে প্রধান মাধ্যম মনে করতো এলাকাবাসীরা। পুকুরের পানিতেই নিত্যকাজ সারতো গ্রামবাসীরা। সে কারনে রেকর্ডটি সংশোধনের সময় নির্দিষ্ট কিছু খাস জলাশয়ের খতিয়ানে দাগ নাম্বারের বিপরীতে মন্তব্য কলামে ’জনস্বার্থে বন্দোবস্তের বহির্ভূত’ শব্দটি লেখা হয়।
কিন্তু এখন জনস্বার্থের সে প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেলেও অপব্যবহার করছে গ্রামের প্রভাবশালীরা। মামলাকারীরা মূলত এই যুক্তিতে দিঘি-পুকুরগুলো জনস্বার্থে ব্যবহার্য দেখিয়ে আদালতে মামলা করেছেন।
সরেজমিনে দেখা উদাহরণগুলো বলছে, এলাকার প্রভাবশালীরা আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে দিঘি-পুকুরগুলোতে তাঁরা নিজেরা মাছ চাষ করছেন অথবা মসজিদ-মাদ্রাসা আর ব্যক্তি উদ্যোক্তার কাছে সেগুলো লাখ লাখ টাকায় লীজ দিচ্ছেন।
এমন ভাবে চলছে বছরের পর বছর ধরে। ইজারা দিতে না পেরে কোনো কোনোটির ক্ষেত্রে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। আর সাধারণ মৎস্যজীবীরাও সুযোগ হারাচ্ছে।
সিংড়া উপজেলা মৎস্য আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাবান মাহমুদ বলেন, সরকার মৎস্যজীবীদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য তাদের সমবায় সমিতির মাধ্যমে খাস পুকুরগুলো বন্দোবস্ত দিয়ে থাকে। কিন্তু গ্রামের প্রভাবশালীরা পুকুরগুলোর দখল নিয়ে মাছচাষ করছে। তাঁর মতে, স্থিতিবস্থা নিষ্পত্তি করে এসব পুকুর প্রকৃত মৎস্যজীবীদের নামে বরাদ্দ দেওয়া দরকার।
নাটোর জজ কোর্টের সরকারি কৌঁসুলি আসাদুল ইসলাম বললেন, রেকর্ড বইতে মন্তব্য কলামের ভিত্তিতে পুকুরের পানি সেচকাজে ব্যবহারের কথা বলে মামলাগুলো করা হচ্ছে। সরকার পক্ষ যুক্তি দেয় যে, এখন পুকুরের পানি তুলে কেউ সেচ করে না। তবে আদালত দলিলপত্রের ভিত্তিতে বাদীর পক্ষে রায় দিচ্ছেন।
পুকুরের পানি সেচ কাজে ব্যবহার দেখিয়ে নাটোরে দুই শতাধিক খাস পুকুর দখল!
সদ্য বিদায়ী নাটোরের জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ এর মতে, আরএস রেকর্ড করার সময় মানুষ পুকুরের পানি নিত্যকাজে ব্যবহার করতো। তখন মানুষের কাজে লাগার জন্য খতিয়ানে জনস্বার্থে ব্যবহার্য কথাটি লেখা হয়েছিল। কিন্তু এখন আর এর প্রাসঙ্গিকতা নেই।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমরা যখনই বন্দোবস্ত দিতে যাচ্ছি, তখনই “জনস্বার্থে ব্যবহাযর্” শব্দটি জুড়ে মামলা করা হচ্ছে। এতে করে বন্দোবস্ত স্থগিত হয়ে যাচ্ছে।” তাঁরা রেকর্ডের ওই শব্দগুলো বাদ দেওয়া যায় কি না সেটা খতিয়ে দেখছেন।
আগামীকাল পড়ুন: একাই দখল করেছেন সরকারী সাতটি পুকুর।
