Home জেলা সংবাদ উম্মে হানি এখন ঋণ মুক্ত

উম্মে হানি এখন ঋণ মুক্ত

488
0

নিজস্ব প্রতিবেদক, গুরুদাসপুর
নিজের শারীরিক অসুস্থতা, ছেলেকে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী করে দেওয়া, মেয়ের বিয়ে দেওয়াসহ সংসার চালাতে গিয়ে এনজিও সংস্থার কাছ থেকে প্রায় ১ লক্ষ টাকার ঋণ নেন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের মহারাজপুর গ্রামের বাসিন্দা জাকারিয়ার স্ত্রী অসহায় বিধবা উম্মে হানি (৫৭)। কিন্তু এই ঋণের টাকা নেওয়া জীবনের কাল হয়ে দাড়িয়েছিল তার। এনজিও সংস্থাগুলো ঋনের টাকা পরিশোধের জন্য তাকে চাপ দিলে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। ঋণ পরিশোধের জন্য বিভিন্ন স্থানে আপ্রাণ চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হন তিনি। সিদ্ধান্ত নেন নিজের কিডনি বিক্রি করে ঋণের ১ লক্ষ টাকা পরিশোধ করবেন। কিন্তু তাকে আর কিডনি বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হবে।

বুধবার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহরিয়াজ উম্মে হানির হাতে ২০ হাজার টাকা তুলে দেন। এসময় গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তমাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এর আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তমাল হোসেন এনজিও কর্মকর্তাদের ডেকে উম্মে হানি বেগমের ১ লক্ষ ঋণের টাকা মওকুফের ব্যবস্থা করে দেন। এছাড়া তিনি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে তাকে অর্থ প্রদান করেন এবং উপজেলা প্রশাসন থেকে তাকে বিধবা ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা প্রধানের আশ^াস দিয়েছেন। আর এই ঘটনায় এখন ইউএনও তমাল হোসেনের প্রশংসায় ভাসছে জেলা ও উপজেলার সর্বত্র।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তমাল হোসেন জানান, উম্মে হানি এনজিও’র কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকা পরিশোধের জন্য কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্তের নিলে এনিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ ছাপা হলে বিষয়টি তার নজরে আসে। বিবেকের তাড়নায় তিনি বসে থাকতে পারেননি। মানবিক সাহায্য করতে তিনি একাধিকবার ছুটে যান উম্মে হানি বেগমের বাড়ীতে। তিনি ওই অসহায় বিধবার ঋনের যাবতীয় খোঁজ নেন এবং এনজিও সংস্থার কর্মকর্তাদেরকে তার অফিসে ডেকে পাঠান। ঋণ পরিশোধে উম্মে হানির অক্ষমতার বিয়টি তিনি এনজিও কর্মকর্তাদের মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার অনুরোধ করলে তারাও উম্মে হানিকে ঋণ মওকুফ করেন।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, উম্মেহানির স্বামী জাকরিয়া কয়েকদিন আগে মারা যান। মৃত্যুর আগে স্বামী জাকারিয়া ৩০ বছর নিরুদ্দেশ থাকার পর অসুস্থ ও অক্ষম হয়ে অবসহায় হানির কাছে ফিরে আসেন। বেকার স্বামীকে নিয়ে সংসার চালানো আরো কঠিন হয়ে পড়ে উম্মে হানির। নিজের অসুস্থতার কারণে দিনমজুরের কাজও করতে পারছিলোনা উম্মে হানি। কুরআন শরীফ শিক্ষা দিয়ে যা আয় হয় তাতে তার সংসার চলেনা। অন্যের পুকুরের ধারে একটি ছাপরা ঘরে থাকেন তিনি। ঔষুধ কিনতে পারেন না। কোনো উপায় না দেখে কিডনি বিক্রির জন্য বিভিন্ন জনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন তিনি। আয় বাড়ানোর জন্য নিজের বাড়িতে বয়লার মুরগীর খামার করেছিলেন। কিন্তু তাতেও লোকসান গুনতে হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তমাল হোসেন আরো জানান, আমরা প্রত্যেকটা মানুষ যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে সজাগ থাকি তাহলে সমাজের প্রতিটি মানুষ ভালভাবে জীবন যাপন করতে পারবে। যে এলাকায় উম্মেহানির বাড়ি সেই এলাকাতে অনেক বৃত্তবান মানুষজন রয়েছে। তাদের একটু সহযোগিতায় উম্মেহানির মত অনেক মানুষের কিডনি বিক্রির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে না। তিনি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের প্রতি অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান।

Previous articleপড়াশোনা বন্ধ হবে না, মরিয়মের পাশে দাড়িয়েছেন ইউএনও
Next articleকেমন আছে বাংলাদেশ ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here