Home শিরোনাম এরা দাদান ব্যবসায়ী, টাকা দেয় মাদকে!

এরা দাদান ব্যবসায়ী, টাকা দেয় মাদকে!

362
0

বিশেষ প্রতিবেদক

বিপদে যখন মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে তখন ছুটেন দাদন ব্যবসায়ীর কাছে। আর এই সুযোগে দাদন ব্যবসায়ীও ঝোপ বুঝে, কোপ মারেন। চড়া সুদ হাকিয়ে টাকা দেয় গরীব, অসহায় মানুষদের। প্রতি সপ্তাহে দাদনের সুদের টাকা পরিশোধ করতেই হাঁসফাঁস হয়ে উঠে সাধারণ মানুষের,তখন তো মূল টাকা থেকে যায় বহুদুরে। এই সুযোগে দাদন ব্যবসায়ীরা ভুক্তভোগির বাড়ি, জায়গা দখল করে নিচ্ছে। নি:স্ব হয়ে খালি হাতে ঘুরছে এ-দ্বার তো সে দ্বার। এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে নাটোরে। কিন্তু দাদন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে না কেউ। প্রভাবশালী হওয়ায় ভুক্তভোগিরাও পাচ্ছে না আইনগত সহায়তা।

আপনি কোথায় দাদনের টাকা খরচ করবেন, সেটার ওপর নির্ভর করে সুদের হার। মাদকে লগ্নি করলে সুদ বেশি আর সংসারে খরচ করলে সুদ কম। সম্প্রতি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের রশিদপুর গ্রামে ঘুরে এমন কিছু ঘটনার তথ্য প্রমান পেয়েছে সজাগ নিউজ ডট কমের এই প্রতিবেদক।

রশিদপুর গ্রামের মৃত খলিলের ছেলে মোহাম্মাদ মাছুম, মৃত ডোমান প্রামানিকের ছেলে এবং ২নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন, আলাল উদ্দিনের ছেলে আফতাব হোসেন এবং আরশেদ আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম। এই চারজন দাদন ব্যবসায়ীর খপ্পরে পড়ে নি:স্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষরা। এসব দাদন ব্যবসায়ীরা এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ার কারনে তাদের ভয়ে কেউ কথা বলার সাহস পায় না।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়,রশিদপুর গ্রামের মৃত খলিলের ছেলে মোহাম্মাদ মাছুম এলাকার দাদন ব্যবসায়ীদের গড ফাদার। তার দাদনের টাকা নাই, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। মাছুম রশিদপুর বাজারে বেলালের ভ্যান ঘর, লোকমান হোসেন প্রতি শুক্রবারে রশিদপুর মসজিদের পাশে জেলকদের দোকানে এবং আফতাব হোসেন শাওনের চা এর দোকানে বসে দাদন ব্যবসা করে।

অভিযোগ রয়েছে,একই এলাকার পুঠিমারী গ্রামের দিন মুজুর কামাল হোসেন দাদন ব্যবসায়ী মাছুমের কাছ থেকে ২লাখ টাকা দাদন নেয়। প্রতি সপ্তাহে এক হাজার টাকায় ৫০টাকা দিতে হয় মাসুমকে। বেশি কিছু দিন লাভের টাকা দেওয়ার পর আর পরিশোধ করতে পারেন নি তিনি। এরপর দাদন ব্যবসায়ী মাছুম ভয়ভীতি দেখিয়ে কামাল হোসেনের এক বিঘা জমি রেজিষ্ট্রি করে নেয়।

দাদন ব্যবসায়ী মাছুমের শিকার রশিদপুর গ্রামের আরেক দিন মুজুর রবিউল ইসলাম। মাছুমের কাছ থেকে সাড়ে ৪লাখ টাকা দাদন নেয়। কিন্তু দাদনের সুদ সহ আসল টাকা ফেরত দিতে না পারার কারণে বাড়ির সাড়ে ৪শতাংশ জায়গা রেজিষ্ট্রি করে নিয়েছে দাদন ব্যবসায়ী মাছুম।

কামাল হোসেন, রবিউল ইসলামের মতো দাদন ব্যবসায়ী মাছুমের লালসার শিকার হয়েছেন মনতাজ উদ্দিন নামের অপর এক দিন মুজুর।

তবে অভিযোগ রয়েছে, দাদন ব্যবসায়ী মাছুম হঠাৎ করেই আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছেন। তার দাদনের বেশির ভাগ টাকা যায়, মাদক ব্যবসায়। এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা তার কাছ থেকে দাদন নিয়ে মাদক ব্যবসা করে আর প্রতি সপ্তাহে উচ্চহারে সুদ পরিশোধ করে। বড়াইগ্রাম উপজেলার মৌখড়া এলাকার এমন দুই সহদোর মাদক ব্যবসায়ীর নাম পেয়েছে সজাগ নিউজ। ইসমাইল এবং ইউসুফ নামে এই দুই সহোদর দাদন ব্যবসায়ী মাছুমের কাছ থেকে ২৭ থেকে ২৮লাখ নিয়ে দেদ্দারসে মাদক ব্যবসা করে যাচ্ছে। এজন্য সপ্তাহে তাদের ২০ থেকে ৩০হাজার টাকা দাদনের সুদের টাকা পরিশোধ করতে হয়।

তবে এবিষয়ে ওই দুই মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে কথা বলতে না রাজ।

এবিষয়ে রশিদপুর গ্রামের দাদন ব্যবসায়ী মোহাম্মাদ মাছুম তার বিরুদ্ধে অভিযোগ স্বীকার করে বলেন,আগে দাদন ব্যবসা করেছি, এটা সত্য, তবে এখন আর দাদন ব্যবসা করিনা। তাছাড়া যারা টাকা দিতে পারতো না তারা বাড়ি বা জমি রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছে। কারও কোন জমি জোর করে দখল করিনি।

আপনার দাদনের টাকা মাদক ব্যবসায় ব্যবহার হয় এমন প্রশ্নের উত্তরে মাছুম বলেন, এটা সঠিক কথা নয়, কেউ টাকা নিলে, সে কোন কাজে ব্যবহার করছে, এটা তো আর আমার জানা নেই।

ছাড়া দাদন ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন, আফতাব হোসেন এবং রফিকুল ইসলাম উচ্চহারে সুদ আদায় করে আসছে। মুলত এই তিনজন মাছুম এর সহযোগি হিসেবে কাজ করে আসছে। এলাকায় তাদের নামেও নিরহ মানুষের জমি এবং বাড়ি দখল করার অভিযোগ রয়েছে।

দাদান ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন বলেন, এলাকায় আমি দাদন ব্যবসা করি, এটা সত্য নয়। তাছাড়া আমি ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি, আমার একটা সুনাম রয়েছে। দাদান ব্যবসার তথ্য যারা দিয়েছে সঠিক দেয়নি। কারো জমি বা বাড়ি দখল করিনি।

এসময় মোবাইল ফোনে দাদন ব্যবসায়ী লোকমান হোসেনের সাথে কথা বলতে গিয়ে ফোন ধরিয়ে দেন চাপিলা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবর রহমানকে। তিনি দাদন ব্যবসায়ীদের পক্ষে সাফাই গান। এসময় তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, এরা কেউ দাদন ব্যবসা করে না। কেউ শত্রুতার বশত সাংবাদিকদের তথ্য দিতে পারে।

তিনি আরও বলেন,এক সময় এই গ্রামে ব্যাপক তাস খেলা হয়। সে সময় এরাই তাস খেলার বিরোধিতা করার কারনে কেউ তাদের দাদন ব্যবসায়ী বানিয়ে ভুল তথ্য দিয়েছেন।

তবে রশিদ এলাকায় একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, এসব দাদন ব্যবসায়ীদের কারণে অনেকে এলাকা ছাড়া হয়েছে। কেউ টাকা পরিশোধ করতে না পারলে তার জায়গা-জমি দখল করে নেয় তারা। এসব দাদন ব্যবসায়ীদের বিচার হওয়া দরকার।

এবিষয়ে গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাহারুল ইসলাম বলেন,বিষয়টি পুলিশের নজরে নাই। তবে কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে অভিযুক্ত দাদন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ সব সময় সজাগ রয়েছে। দাদানের টাকা যদি মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে দিলে কঠোর আইন প্রয়োগ করা হবে।

Previous articleগোপালপুর পৌরসভা: গরীবের চাল ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগ
Next articleসেই লায়লার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রতিমন্ত্রী পলক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here