
সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলায় ভরা এ দেশ, বাংলাদেশ। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। এ দেশ যেন প্রকৃতির এক অপরুপ লীলাভূমি। মাঠের পরে মাঠ, সাগরের উত্তাল ঢেউ, পাহাড়ের চূড়ায় মেঘের ভেলা, সবুজের অরণ্য। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়, ভরে যায় প্রাণ। এমন একটি সমৃদ্ধশীল দেশ এমনিতেই অর্জিত হয়নি। ৫২ এ ভাষা আন্দোলন, ৭১ এ মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত এক ভূখন্ডের নাম বাংলাদেশ। সালাম, রফিক, জব্বারের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলা ভাষা। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও যেন পরাধীন আমরা। টেলিভিশনের পর্দায় তাকালে বা পত্র-পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে সীমান্তে বিএসএফ এর গুলিতে বাংলাদেশী হত্যা। কিন্তু কেন ? প্রতিবেশী দেশের আচরণ কি এটা হওয়া উচিত ? ভারতের উচ্চ পর্যায় থেকে বারবার প্রতিশ্রæতি দেওয়ার পরও সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যা বন্ধ হয়নি।
বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সীমান্তে বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকদের হাতে মারা গেছে ৯৩৬ জন বাংলাদেশি। এর মধ্যে বিএসএফের হাতে ৭৬৭ জন ও ভারতীয়দের হাতে ১৬৯ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে সীমান্ত বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা, তবুও দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি দু’দেশের সরকারের। আর কত দিন চলবে এভাবে সীমান্তে হত্যাকান্ড ? আর কত মায়ের বুক খালি হবে কেউ কি বলতে পারেন ? এই বর্বরতার একটা শেষ চাই, এই নৃশংসতার অবসান চাই। সম্প্রতি এ হত্যাকান্ড আরও বেড়ে গেছে। সকলের এখন একটাই প্রশ্ন সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা বন্ধ হবে কবে ? এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারে একমাত্র ভারত সরকার অথবা বিএসএফ। আর এ হত্যাকান্ড বন্ধে বাংলাদেশ সরকারের কঠোর হতে হবে। প্রয়োজনে যেতে হবে জাতিসংঘে।
দিন দিন বেড়েই চলেছে আবরার-বিশ্বজিৎ-রিফাতদের সংখ্যা। বাড়ছে ফেলানী, তনু, রাফি, সায়মাদের সংখ্যাও। পৃথিবীতে বাবা-মা যেখানে সন্তানের কাছে সবচেয়ে নিরাপদ সেখানে বাবার দ্বারা নিজের ঔরসজাত শিশু দিনের পর দিন ধর্ষিত হচ্ছে ! শিক্ষকের দ্বারা ছাত্রী হচ্ছে ধর্ষণের শিকার, শশুরের ধর্ষণের শিকার পুত্রবধূ। সম্প্রতি রাজধানীতে সায়মা নামের এক শিশুকে ধর্ষণ করে নির্মমভাবে হত্যা করে, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ধর্ষণ হচ্ছে। শিশু, বালিকা, যুবতী, স্কুল-কলেজের ছাত্রী, শিক্ষিকা, গৃহবধূ, প্রতিবন্ধী, গার্মেন্টস কর্মী, ডাক্তার, চার সন্তানের জননী, এমনকি বৃদ্ধাও বাদ যাচ্ছে না ধর্ষিতার তালিকা থেকে। কিন্তু এটা কাম্য নয়। শিক্ষকের লালসার শিকার হচ্ছে ছাত্রীরা, গৃহবধূও ধর্ষিতা হচ্ছে প্রতিবেশী যুবকদের দ্বারা। মনে হয় দেশে ধর্ষণের একটা প্রতিযোগিতা চলছে। বর্তমানে পরিস্থিতি অনুযায়ী বাবার বাড়ি, শশুরবাড়ি, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট কোথাও কোন নিরাপত্তা নেই নারীদের। সামাজিক অবক্ষয়, পুরুষের প্রতি নারীদের অনৈক ভঙ্গিমায় তাকানো, পর্দাহীন চলাফেরা, ধর্মীয় অনুশাসনের অভাব এসবই দায়ী ধর্ষণের জন্য। অন্যদিকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করা যেন ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বজিৎ হত্যাকারীদের বিচার দেরিতে হওয়ায় বেড়েই চলেছে প্রকাশ্য হত্যাকান্ড। প্রকাশ্যে গুলি করে মটরসাইকেল ছিনতাই, টাকা ছিনতাই। প্রকাশ্য হত্যা, গুম, ধর্ষণ, রাহাজানি, চাঁদাবাজি, সুদ-ঘুষ, পরকীয়া, দূর্নীতি, অনিয়ম, সীমান্ত হত্যা সবকিছু দেখে মনে হয় দেশটা দিন দিন আবার সেই জাহেলিয়াতের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
এমন দেশ তো আমরা চাইনি, আমরা চেয়েছিলাম স্বাধীন-সার্বভৌম একটি দেশ। যে দেশে থাকবে শুধুই শান্তি আর শান্তি। বর্তমানে ধর্ষণ, খুন, দূর্নীতি, চাঁদাবাজি সব কিছু মিলিয়ে দেশটা আজ বহিঃ বিশ্বের কাছে মূল্যহীন হয়ে পড়ছে। কোনভাবেই কমছে না ধর্ষণ, হত্যা, চাঁদাবাজি। দেশে মনে হয় আর মানুষ নেই। এমতাবস্থায় সবাইকে মানুষ হতে হবে। কাজ করতে হবে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য। এগিয়ে আসতে হবে মানবতার জন্য। আবার সবাইকে মানুষের মত মানুষ হতে হবে। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরেও মুক্তিযোদ্ধা-রাজাকার দ্ব›দ্ব কাঁটেনি। তাহলে সেই স্বাধীনতার স্বাদ কবে ভোগ করবে স্বাধীনতাকামী মানুষেরা। দেশজুড়ে অপরাজনীতি, ছাত্ররাজনীতির নামে সন্ত্রাসবাদ, ক্যাসিনো কান্ড, হত্যাযজ্ঞ, লুটতরাজ। এমতাবস্থায় দেশের সচেতন নাগরিকদের প্রশ্ন কেমন আছে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ? কেমন আছে বাংলাদেশ ?
লেখকঃ আবু জাফর সিদ্দিকী, গণমাধ্যম কর্মী।
