Home বিশেষ সংবাদ কোটি টাকার কাজ বৃষ্টি ও কাঁদা-পানিতে!

কোটি টাকার কাজ বৃষ্টি ও কাঁদা-পানিতে!

248
0

সড়ক সংস্কারে বরাদ্দ কোটি টাকা। কিন্তু  সেই সংস্কার কাজ চলছে ঝমঝমে বৃষ্টি আর কাঁদা-পানিতে। আর নিরব দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে দেখছে সাধারণ মানুষ।

এমন দৃশ্য নাটোরের সিংড়ার ছাতারদিঘী ইউনিয়নের পাওটা-বাঁশবাড়িয়া গ্রামীণ সড়ক সংস্কার কাজে।

সেখানে দেখার যেন কেউ নেই। আছে শুধু ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে সাঁরি সাঁরি নিরব দর্শক। আর চোখ দিয়ে দেখা ছাড়া কারো মুখে যেন কোন কথা নেই। কারণ সেই কাজের ঠিকাদার এতটাই প্রভাবশালী যে চলমান কার্পেটিং কাজের তথ্য খুঁজতে প্রকৌশলীকে একাধিক বার ফোন দিয়ে অবশেষে তার দপ্তরে গিয়েও ওই কাজের সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।

আর এবিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী আহম্মেদ রফিক এর মুখের ভাষ্য, এটা অনেক আগের কাজ তাই কার্যালয়ে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আজকে সেখানে কোন নতুন করে কার্পেটিং করার কথা ছিল না। যা কিছু হয়েছে তার অজান্তেই হয়েছে বলে জানান তিনি।

সোমবার (৭ আগস্ট) দিনব্যাপি ছিল সিংড়া উপজেলায় ঝমঝমে বৃষ্টি। ঘড়ির কাঁটা বিকেল ৩ টা বাজতেই এই প্রতিবেদকের মুঠোফোনে বৃষ্টি আর কাঁদা-পানিতে রাস্তার কার্পেটিং কাজ চলছে খবর আসে। বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরে মুঠোফোনে জানিয়ে কোন ব্যবস্থা না হওয়ায় অবশেষে সন্ধ্যা সোয়া ৬ টায় উপজেলার দুর্গম ছাতারদিঘী ইউনিয়নের পাওটা-বাঁশবাড়িয়া রাস্তায় গিয়ে দেখা যায়, ঝমঝমে বৃষ্টি ও কাঁদা-পানিতেই যত্রতত্র ভাবে কার্পেটিং কাজ চলছে। সেখানে কাজ তদারকির দায়িত্বে কেউ না থাকলেও আছে শুধু ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা সাঁড়ি সাঁড়ি নিরব দর্শক।

সেখান থেকে এই প্রতিবেদকের মুঠোফোনে ভিডিও কলে উপজেলা প্রকৌশলীর কথা হয়। আর বৃষ্টির মধ্যে কার্পেটিং কাজ দেখে তিনিও অবাক হন। তারপরও বৃষ্টির মধ্যেই আরো আধা ঘন্টা কাজ চলমান থাকে। ততক্ষণে সেখানে জাইদুল নামের একজনকে পাইচারি করতে দেখা গেলেও তিনি নিজেকে লেবার সর্দারের ভাই পরিচয় দিয়ে দ্রুত সটকে পড়েন।

অবশেষে ঝমঝমে বৃষ্টিতে ভিজে উপজেলা সদরে প্রকৌশলীর কার্যালয়ে তথ্য নিতে এসে রাত ৮ টা নাগাদ দেখা যায় উপজেলা প্রকৌশলী আহম্মেদ রফিক আর ওই কাজের ঠিকাদার উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আসাদুজ্জামান লিটন খোশ গল্পে ব্যস্ত রয়েছেন। সেখানে প্রায় আধা ঘন্টা বার বার প্রকৌশলীর কাছ থেকে ওই কাজের তথ্য চেয়েও কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। পরে বাড়িতে ফিরে এসে একাধিকবার প্রকৌশলীর মুঠোফোনে ফোন দিয়েও সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।

তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে উপজেলার ছাতারদীঘি ইউনিয়নের পাওটা মাদ্রাসা হইতে বাঁশবাড়িয়া বাবলুর পুকুর পাড় পর্যন্ত ১৫২০ মিটার গ্রামীণ রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ কাজ পান জলি এন্টার প্রাইজ নামের নাটোরের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর এই কাজের ব্যয় ধরা হয় এক কোটি ১৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।

তবে কাজটি সিংড়ার আওয়ামীলীগ নেতা আসাদুজ্জামান লিটন করছেন। পাওটা বাজারের মুদি দোকানি আব্দুর গফুর বলেন, সারা দিন চোখের সামনে বৃষ্টির মধ্যে কাজ চলছে। কথা বললেও তো কেউ শুনে না। কাজ শেষ না হতেই উঠে যাচ্ছে রাস্তার কার্পেটিং।এই তো হল আমাদের উন্নয়ন চিত্র!

পাওটা গ্রামের আবুল কালাম আজাদ, খলিল মাহমুদ, মিলন হোসেন সহ অনেকেই বলেন, আজ ওহেদ হাজ্বীর বাড়ি থেকে পাওটা নতুন বাজার পর্যন্ত প্রায় ৮০০ফিট বৃষ্টির পানি ও কাঁদার উপর কার্পেটিং হয়েছে। আর এই প্রথম বৃষ্টির মধ্যে কাজ হওয়ায় লোকজন ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে মজা লুটছেন। কাজ এতটাই নিম্নমানের হচ্ছে যে শেষ না হতেই পেছনের অনেক জায়গায় উঠে যাচ্ছে এবং ভেঙে পুকুরে বিলীন হতে শুরু করেছে। তারা দ্রæত সঠিক তদারকির জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

কার্পেটিং কাজে নিয়োজিত রোলার ড্রাইভার হাবিবুর রহমান বলেন, বৃষ্টির মধ্যে কার্পেটিং করলে তার কিবা করার আছে? তিনি শুধু নির্দেশ মোতাবেক রোলিং করছেন।

এবিষয়ে ঠিকাদার উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আসাদুজ্জামান লিটন বলেন, আজ শুধু গতকালের কার্পেটিং অংশের সিলকোর্ট করার কথা ছিল। কিন্তু তার অজান্তেই সামান্য কিছু কার্পেটিং হয়েছে। তিনি সংবাদ প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন।

কাজ দেখা শোনার দায়িত্বে নিয়োজিত উপ-সহকারী প্রকৌশলী রহমত আলী বলেন, তিনি ছাড়াও ওই অফিসের আরো তিনজন ওই কাজ দেখাশোনা করছেন। আর সকাল ৯ টায় বৃষ্টির কারণে ফোনে তিনি লেবারদের কাজ বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু বৃষ্টির মধ্যে এভাবে কার্পেটিং করাটা ঠিক হয় নাই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা খাতুন বলেন, উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে কথা বলে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।

Previous articleবড়াইগ্রামে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে দু’জন নিহত: আহত ৫
Next articleগলা কেটে চালকের ভ্যান ছিনতাই!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here