Home কৃষি চলনবিলে বোরোর বীজতলায় কোল্ড ইনজুরি: চিন্তিত কৃষক

চলনবিলে বোরোর বীজতলায় কোল্ড ইনজুরি: চিন্তিত কৃষক

556
0

সাইফুল ইসলাম:
ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতের কারণে শষ্যভান্ডার খ্যাত চলনবিলে মরক দেখা দিয়েছে বোরো বীজতলায়। তীব্র শীতের কারণে সবুজ পাতা সাদা আকার ধারন করে ক্ষেতেই পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বীজতলা।এতে করে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চলনবিলের চাষীরা। বীজতলা রক্ষায় ঔষধসহ বিভিন্ন পদ্ধতি খাটিয়েও রক্ষা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কৃষকদের। এতে করে বোরো ধান রোপন নিয়ে দু:চিন্তায় পড়েছেন চলনবিলের কৃষকের।

কৃষি বিভাগ বলছে, অব্যাহত ভাবে শৈত প্রবাহ চলার কারনে কিছু কিছু এলাকায় বোরো বীজতলা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এই রোগ থেকে বাঁচার জন্য কৃষকদেও নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

কৃষকরা জানায়, গত দু’বছর ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যায় চলনবিলের কৃষকের স্বপ্নের সোনার বোরো ধান ঘরে তোলার আগেই পানিতে ভেসে যায়। ফলে এই অঞ্চলের লক্ষাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে আসছে। নতুন করে চলতি বছরের শুরুতে ইরি বোরো ধানের চারা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আবারও কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

সরেজমিনে চলনবিলের সিংড়া ঘুরে দেখা যায়, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর পরই বোরো ধান রোপনের জন্য অনেক কৃষক জমিতেই বোরো বীজতলা তৈরী করেছেন। বোরো ধান রোপনের জন্য বেশির ভাগ কৃষক জমি প্রস্তুত করে ধান রোপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেউ কেউ আগাম জাতের ধান রোপন শুরু করেছেন। কিন্তু শৈত অব্যাহত থাকার কারনে উপজেলার নিংগইন ও জোড়মল্লিকা, সাতপুকরিয়া, ডাহিয়া সহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের বোরো বীজতলায় কোল্ড ইনজুরি দেখা দিয়েছে।

শীত আর ঘন কুয়াশার কারনে বীজতলার সবুজপাতা সাদা বর্ণ ধারণ করে ক্ষেতেই পচে যাচ্ছে। বীজতলা বাঁচানোর জন্য কৃষকরা প্রাণ পণ চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়ে পড়ছেন। এতে কওে কৃষকরা নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

কথা হয় নিংগঈন গ্রামের কৃষক মো. আকবর আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ধানের চারাতে ছত্রাক নাশক ও থিওভিট ভিটামিন দেয়া হয়েছে। এতেও কোন কাজ হচ্ছে না। শীতে আস্তে আস্তে চারা মরে যাচ্ছে। আমরা কোন ভাবেই বোরো বীজতলা বাঁচাতে পারছিনা।

আরিফুল ইসলাম নামে অপর এক কৃষক বলেন, বন্যার পানি নামতে দেরি হওয়ায় কারণে বীজতলা তৈরীতে বিলম্ব হয়েছে। এখন শীতে বীজতলার পাতা সাদা হয়ে যাচ্ছে। আর কোন ঔষধে কাজ হচ্ছে না।

সিংড়ার চৌগ্রামের কৃষক মহিদুল ইসলাম বলেন, চলনবিল অঞ্চলে বোরো ধান রোপনের জন্য কৃষকরা সাধারণত নভেম্বও মাস থেকে প্রস্তুতি শুরু করে। ডিসেম্বর থেকে আগাম জাতের বোরো ধান রোপন শুরু হয়। অনেকে বোরো ধান রোপন শুরু করেছে। আবার কেউ কেউ জমি প্রস্তুত করছে। কিন্তু দফায় দফায় শৈত প্রবাহ আর শীতের কারনে বোরো বীজতলা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এতে করে ধান রোপনেও পিছিয়ে যাচ্ছে কৃষকরা। তাছাড়া এখন বোরো বীজতলা নষ্ট হলে আর বীজতলা তৈরী করা সম্ভব নয়। যার কারনে শীতে বোরো বীজতলা নষ্ট হওয়ার কারনে কৃষকরা দুচিন্তার পাশাপাশি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, নাটোর জেলায় এবার ৫৬হাজার হেক্টও জমিতে বোরো ধান রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে চলনবিলের সিংড়া উপজেলাতেই ৩৬হাজার হেক্টও জমিতে বোরো ধান চাষ হচ্ছে। তবে জেলায় ইতোমধ্যে ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপন সম্পন্ন হয়েছে।

এবিষয়ে সিংড়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, গত কয়েক দিনের ঘন কুয়াশায় কিছু এলাকার বীজতলা কোল্ড ইন্জুরিতে আক্রান্ত হয়েছে। আমরা কৃষি অফিস থেকে রাতের বেলা বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার পরামর্শ দিচ্ছি। আর এবিষয়ে মাঠ পর্যায়ে ২৯জন উপ-সহকারী কাজ করে যাচ্ছে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে এলেই এ সমস্যা থেকে বীজতলা আবার ভালো হয়ে যাবে। এতে কৃষকের ভয়ের কোন কারণ নেই।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উ-পরিচালক সুব্রত কুমার জানান, বোরো বীজতলাকে কোল্ড ইনজুরিতে থেকে বাঁচাতে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সূর্যের আলো কম থাকার কারনে বীজতলায় এই সমস্যা হচ্ছে। এজন্য কৃষকরা থিওভিট এবং জিপসাম সার ব্যবহার করলে কোল্ড ইনজুরি থেকে বোরো বীজতলা রক্ষা করা সম্ভব হবে। তবে ধান রোপন বা উৎপাদনের ওপর কোন প্রভাব পড়বে না।

Previous articleভিটামিন “এ” প্লাস ক্যাম্পেইন সফল করতে প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত
Next articleসিংড়ায় মুজিব বর্ষ উদযাপনে প্রস্তুতি সভা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here