Home শিরোনাম জাল দলিল তৈরি: আইনজীবীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতের মামলা,পরোয়ানা

জাল দলিল তৈরি: আইনজীবীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতের মামলা,পরোয়ানা

193
0
আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাল দলিল তৈরি করে সরকারি জমি (অর্পিত সম্পত্তি) আত্মসাতের অভিযোগে এক আইনজীবীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত হয়ে দুটি মামলা করেছেন নাটোরের একটি আদালত। আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে।

আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মালেক শেখ বলেন, একটি মামলায় সিংড়া উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আইনজীবি মানসী ভট্টাচার্য্যসহ ৫ জন এবং অপর মামলায় আরও ৫ জনের নামে আদালত মামলা করেছেন। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন।

২৪ অক্টোবর নাটোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান স্বপ্রণোদিত হয়ে সদর আমলী আদালতে মামলা দুটি করেন।

একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে- ফয়সাল আহম্মেদ, মানসী ভট্টাচার্য্য, তার দুই ভাসুর সঞ্জীত কুমার মৈত্র, অরুণ কুমার মৈত্র এবং আরেক ভাসুরের ছেলে বন্ধন কুমার মৈত্রকে।

অপর মামলার আসামি- আব্দুর রাজ্জাক, রফিকুল ইসলাম, হানিফ সরদার, ইদ্রিস আলী ও আব্দুল গফুর। তাদের সবার বাড়ি নাটোরের সিংড়া উপজেলার হাসপুকুড়িয়া গ্রামে।

মামলা দায়েরের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ অক্টোবর সদর আমলী আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোসলেম উদ্দীন অপরাধ আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিলে মানসী ভট্টাচার্য্য ও তার ভাসুর সঞ্জীত কুমার মৈত্র এবং অরুণ কুমার মৈত্র, আরেক ভাসুরের ছেলে বন্ধন কুমার মৈত্র, মানসীর ছেলে দর্পণ কুমার মৈত্র এবং অন্য দুই দাতা ষষ্টি সাহা চৌধুরী এবং বাপ্পি চৌধুরী উপজেলার হাসপুকুড়িয়া গ্রামের ফয়সাল আহম্মেদের কাছে ৪০ শতাংশ জমির বিক্রয় কবলা দলিল করে দেন। নিজের নাবালক ছেলের পক্ষে সেখানে অভিভাবক হিসাবে ছিলেন মানসী ভট্টাচার্য্য।

কিন্তু ষষ্টি সাহা চৌধুরী এবং বাপ্পি চৌধুরী নামে কোনো লোকের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি এবং তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরও ভুয়া। আর যে জমির কথা বলা হয় সেটি বাস্তবে একটি পুকুর এবং সেটি অর্পিত সম্পত্তি।

ফয়সাল আহম্মেদ দাবি করেন ১৯৮৬ সালে গিরিন্দ্র, রাই সুন্দরী এবং কানাইলালের কাছ থেকে দলিল করে তার নামে ৯৪ শতাংশ জমি হস্তান্তর করা হয়েছে। যদিও ওই বছরে যেসব দলিল নম্বরের কথা তিনি বলেন সেসব দলিলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

এর আগে ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর ফয়সাল আহম্মেদ ওই জমির ঘোষণামূলক ডিক্রির দাবিতে সিংড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), সিংড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং নাটোরের জেলা প্রশাসককে বিবাদী করে সিংড়া সহকারী জজ আদালতে অন্য প্রকার (Other Class Suit) মামলা করেন।

পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ২৪ জুন নাবালক দর্পন কুমার মৈত্র এবং তার দুই চাচা এবং এক চাচাতো ভাইয়ের পক্ষে দর্পনের মা মানসী ভট্টাচার্য্যকে ওই মামলায় পক্ষভুক্ত করা হয়।

একই বছরের ২১ নভেম্বর ফয়সালের সঙ্গে ওই পুকুর মানসী ভট্টাচার্য্যের শরিকরা মিলে ভোগদখল করছেন বলে সোলোনামা দাখিল করেন ফয়সাল আহম্মেদ।

সোলেনামায় মানসী ভট্টাচার্য্য এবং ফয়সাল নিজে আদালতে ফয়সালের ১৯৮৬ সালের দলিল সঠিক এবং রেকর্ডীয় মালিক গিরিন্দ্র, রাই সুন্দরী এবং কানাইরাল ফয়সালকে হস্তান্তর করে বলে সাক্ষ্য দেন। পরে সোলেনামামূলে অন্য প্রকার মামলায় ডিক্রি পান ফয়সাল।

আদালত সূত্র জানায়, ১৭৯৯৫/১৯৮৬ এবং ৩১২৬/২০১৯ দলিলমূলে ফয়সালকে জমি পাইয়ে দিতেই নাবালক ছেলের পক্ষে মানসী ভট্টাচার্য্য এবং শরিকরা ওই মামলায় পক্ষভুক্ত করা হয় বলে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।

সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, মানসী ভট্টাচার্য্যসহ বাকি আসামির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা হাতে পেয়েছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।

এদিকে, জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল তৈরি করে সেই দলিলের জমি ক্রয়ের দাবি করে ফয়সাল আহম্মেদের নামে প্রচারের অভিযোগে ফয়সালের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ২৫ মার্চ আদালতে মামলা করেন ফয়সালের প্রতিবেশী আব্দুর রাজ্জাক।

পরে আদালত পিবিআইকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেন। পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, ভুয়া দাতা দেখিয়ে দলিল করেছেন ফয়সাল আহম্মেদ এবং আব্দুর রাজ্জাক। এর বাইরে সাব রেজিস্ট্রারের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় সেটি জাল দলিল।

আব্দুর রাজ্জাকের দায়ের করা মামলায় ফয়সাল আহম্মেদকে দুই বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মো. মেহেদী হাসান।

সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওহিদুর রহমান মানসী ভট্টাচার্য্য মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এখন তিনি ওই শাখারই কায্যনির্বাহি সদস্য। অপরাধ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।

Previous articleদুই বোনের বিষপান, একজনের মৃত্যু
Next articleএকজনের ভোট দিল আরেকজন!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here