Home সজাগ অনুসন্ধান টাকার ময়লায় স্বাস্থ্যঝুঁকি, প্রস্রাবে ইনফেকশনের শঙ্কা

টাকার ময়লায় স্বাস্থ্যঝুঁকি, প্রস্রাবে ইনফেকশনের শঙ্কা

334
0

একই টাকা একেক জনের হাত ঘুরে আরেকজনের হাতে যাচ্ছে। ময়লা আর্বজনায় পড়ে যাওয়া টাকা আবার ফিরে আসছে হাতে হাতে। কিছু টাকায় এতো বেশি ময়লা থাকে, যা হাতে ধরতেও সংকোচ কাজ করে। এসব টাকায় রয়েছে ‘ই-কোলাই’ ও ‘ফেকাল কলিফর্ম’ জাতীয় ব্যাকটেরিয়া, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অনার্সের শেষ বর্ষের ছাত্রী নিশাত তাসনিমের এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে আসে। গবেষণার শিরোনাম ছিল ‘স্ট্যাডি অন দ্যা ব্যাকটেরিয়াল কন্টামিনেশন অন পেপার মানি অ্যান্ড কয়েনস অব খুলনা সিটি এরিয়া’। ছয় মাস ধরে নগরীর ১৫ টি উৎস থেকে টাকা ও কয়েন সংগ্রহ করে তা ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। গবেষণায় মাংস, মাছ ও মুরগি বিক্রেতার কাছ থেকে নেওয়া টাকায় সবচেয়ে বেশি ব্যাকটেরিয়া ও মলের জীবাণু পাওয়া যায়। অন্য ১২টি উৎস থেকে নেওয়া টাকার নোট এবং কয়েনেও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের গবেষণা সুপারভাইজার অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘টাকা ছাড়া প্রাত্যহিক জীবন অচল। অথচ সেই টাকাই আমাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াচ্ছে। টাকা ধরে হাত না ধুয়ে খাবার খেয়ে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’ শিগগিরই এ বিষয়ে আরও বড় পরিসরে এক বছর ধরে আরেকটি গবেষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এই গবেষণার ব্যাপারে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এস এম কামাল বলেন, ‘টাকায় বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও জীবানু থাকে। মাঝেমধ্যে দেখা যায় টাকা মাটিতে, ময়লার মধ্যে কিংবা ড্রেনে পড়ে যায়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সেই টাকা শুকিয়ে আবার তা ব্যবহার করেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় টাকার নোট ও কয়েনে যে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে, তা মলের মধ্যে থাকে। টাকায় যে ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, তা পেটে গেলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া প্রস্রাবের ইনফেকশনও হতে পারে।’

গবেষণায় দেখা গেছে- মাংসের দোকান থেকে সংগ্রহ করা টাকার নোটে সর্বাধিক ২৬৭০টি ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া, মাছ বিক্রেতার টাকায় ২৬০০, মুরগি বিক্রেতার টাকায় ২৩০০ ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া এবং মাছ ও মুরগি বিক্রেতার টাকায় ২৮০০ এবং মাংসের দোকানের টাকায় ২৬০০ ফেকাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। অন্যান্য উৎস থেকে সংগ্রহ করা টাকায়ও এ দুটি ব্যাকটেরিয়া মিলেছে, তবে সেগুলো ১০০০ এর নিচে রয়েছে।

এছাড়া মাছ বিক্রেতার দোকান থেকে সংগ্রহ করা কয়েনে ২৬০০ ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া, মুরগির দোকানের কয়েনে ২৪৮০, জুস বিক্রেতার কয়েনে ২৬০০, মাংসের দোকানের কয়েনে ২১৩০, পথ খাবারের দোকানের কয়েনে ১৭৯০ ও ফুচকার দোকানের কয়েনে ১২৫০ ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। মুরগির দোকানের কয়েনে ২৯০০, মাছ বিক্রেতার কয়েনে ২৮০০, মাংস বিক্রেতার কয়েনে ২৬৬০, ফল বিক্রেতার কয়েনে ২০৬০, পথ খাবারের দোকানের কয়েনে ১৫৭০, ফুচকা বিক্রেতার কয়েনে ১৪৬০, সাধারণ মানুষের কয়েনে ১২০০, ভিক্ষুকের কয়েনে ১০৮০ ফেকাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়।

অন্যান্য উৎস থেকে সংগ্রহ করা কয়েনেও এ দুটি ব্যাকটেরিয়া মিলেছে, তবে সেগুলো ১০০০ এর নিচে।

খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. পার্থ প্রতীম দেবনাথ জানান, এক হাজারের বেশি পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ঝুঁকিপূর্ণ।

Previous articleবৃষ্টিতে ভোগান্তি রেল যাত্রীদের (ভিডিও সহ)
Next articleবৃষ্টিতে ভোগান্তি রেল যাত্রীদের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here