
ক্রীড়া প্রতিবেদক:
১৮ আগস্ট রবিবার রাত ৮টা। নাটোর ইনডোর স্টেডিয়ামের সামনে জেলা প্রশাসনের বেশ কিছু গাড়ী। সাথে রয়েছে ট্রাফিক পুলিশ, ব্যবসায়ী সহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষের কিছু মোটরসাইকেল। ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখা মিললো ইনডোর স্টেডিয়ামের প্রথম কোট দখল করে ব্যাডমিন্টন খেলছে প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা। সাথে রয়েছেন নাটোর শহরের কিছু ব্যবসায়ী ও শিক্ষক। সবাই শরীর গরম করার জন্য প্রতিদিন সন্ধ্যায় ইনডোর স্টেডিয়ামের কোট দখল করে খেলে আসছে। পাশেই খেলোয়াররা কোটের অভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এমন দৃশ্য প্রতিনিয়ত হওয়ার কারনে অনুশীলন করতে পারছেনা মূল খেলোয়াররা।
সূত্র জানায়, সন্ধ্যা হলেই জেলা প্রশাসনের উর্দ্ধতন কিছু কর্মকর্তারা শরীর গরম করার নামে ব্যাডমিন্টন কোট দখলে নেই। এরসাথে যোগ দেয় জেলা পুলিশের কিছু উর্দ্ধতন কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী এবং কলেজের কিছু শিক্ষকরা। শুরুতে জেলা প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তারা খেলা শুরু করলেও দিন দিন বাড়ছে সৌখিন খেলোয়ারদের সংখ্যা। যার কারণে নিয়মিত অনুশীলন ব্যাহত হচ্ছে মূল খেলোয়ারদের। সম্মানের খাতিরে খেলোয়াররা কোট ছেড়ে দিলেও অনেক সময় ঘটছে বিপত্তি।
কোট সংকটে অনুশীলন না করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন খেলোয়ার।
খেলোয়াররা জানান, আগামী সেপ্টেম্বরে জাতীয় জুনিয়র টুর্নামেন্ট শুরু হতে যাচ্ছে। কিন্তু বেশির ভাগ সময় স্টেডিয়ামের কোট দখল থাকার কারনে তারা নিয়মিত প্রশিক্ষণে অংশগ্রহন করতে পারছেনা। দ্রুত এই পরিস্থিতির উন্নয়ন দরকার।
জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্র জানায়, ২০১৮সালে শুধুমাত্র ব্যাডমিন্টন খেলার জন্যই নাটোর ইনডোর স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে স্টেডিয়ামটি উদ্বোধন না হলেও থেমে নেই খেলা। প্রতিদিন অন্তত ২৫ থেকে ৩০জন খেলোয়ার প্রশিক্ষণে অংশগ্রহন করে। কিন্তু কোট সংকটের কারনে সবাই অনুশীলনে অংশগ্রহন করতে পারছে না। প্রশাসনের এই ধরনের আচরনে অনেকে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা ক্রীড়া সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাডমিন্টন মুলত শীতের খেলা। কিন্তু অনেকে গা গরম করার জন্য ইনডোরে এসে খেলছে। যেটা মূল খেলোয়ারদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে যাচ্ছে। আগামী শীতে আরও সৌখিন খেলোয়ারদের সংখ্যা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছেন।
জাতীয় জুনিয়ার ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহন করা খেলোয়ার রিফাত হোসেন বলেন, আমরা যখন প্যাক্টিস শুরু করি, তখন প্রশাসনের এবং কিছু লোকজন এসে আমাদের কোট দখল করে খেলা শুরু করে। আবার কিছু বলতে গেলে তারা আমাদের সাথে খারাপ আচরন করেন। আমরা ঠিকমত প্যাক্টিস করতে পারছিনা।
এক পাশে খেলছেন খেলোয়ার, অপর প্রান্তে কোট দখল করে খেলছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
জাতীয় জুনিয়ার ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহনকারী আরেক খেলোয়ার রাতুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের লোকজনের সম্মানে প্যাক্টিস না করেই আমাদের তড়িঘড়ি করে কোট ছেড়ে দিতে হয়। এতে করে আমরা ভাল ভাবে প্যাক্টিস করতে পারছিনা। তারা যদি খেলেবে, তাহলে রাত ১০টার পরে খেললে আমাদের জন্য ভাল হয়।
নিয়মিত ইনডোর স্টেডিয়ামের ব্যাডমিন্টন খেলেন ব্যবসায়ী সেলিম রেজা। তিনি বলেন, প্রশাসনের লোকজনকে সঙ্গ দিতে আমরা ইনডোর স্টেডিয়ামে যাই। কারণ প্রশাসনের লোকজনই আমাদেরকে খেলার জন্য ডাকে।
আপনাদের জন্য মূল খেলোয়াররা খেলতে পারে না এমন প্রশ্নে সেলিম রেজা বলেন, যারা খেলে তারা তো বেশির ভাগ ছাত্র। আমরা রাত ৯টা ১০টার পর খেলতে আসি, তখন তারা চলে যায়।
নাটোর জেলা ব্যাডমিন্টনের প্রশিক্ষক ইমরান হোসেন বলেন, এখানে ৪০ থেকে ৪৫জন খেলোয়ার প্রতিদিন প্রশিক্ষনে অংশগ্রহন করেন। কিন্তু তিনটি কোড থাকলেও সন্ধ্যার পর প্রশাসন এবং ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যায়, যার কারনে খোলোয়াররা ঠিকমত প্রশিক্ষণ নিতে পারে না। আবার অনেকে কোটের অভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এই সংকটটা নিরসন হওয়া দরকার।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি ও ব্যাডমিন্টন টূর্নামেন্টের আহবায়ক লুৎফর রহমান আনন্দ বলেন, ইনডোর স্টেডিয়াম খোলোয়ারদের জন্য। কিন্তু কিছু ব্যবসায়ী জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে খেলার কোট দখল করে রাখে। যার কারনে মূল খেলোয়াররা খেলতে পারছেনা।
তিনি আরও বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরের ২০তারিখের জাতীয় জুনিয়ার ব্যাডমিন্টনে খেলার দিন ধার্য়্য করা হয়েছে। এখন খেলোয়ারদের বেশি বেশি প্যাক্টিস করা দরকার। কিন্তু কোট দখল করে রাখার কারণে খেলোয়াররা সেটা করতে পারছেনা। আমরা এবিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসনের কথা বলবো। এই অবস্থা চলতে থাকলেও নতুন নতুন খেলোয়ার তৈরী হবে না।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো: শাহরিয়াজ বলেন, কারো জন্য যদি খেলোয়ারদের সমস্যা হয়, সেটা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ আগে খেলোয়ারদের খেলার সুযোগ করে দিতে হবে।
