
বিশেষ প্রতিবেদক:
নাটোর মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এবং সোর্সরা চাঁদাবাজির সময় ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটর সাইকেলটিকে চাপা দিলে দুলা ভাই এবং শ্যালকের মৃত্যু হয়ে। এসময় স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে ধাওয়া দিলে পালিয়ে যায় তারা। শুক্রবার সন্ধ্যায় নাটোর শহরের বনবেল ঘড়িয়ায় ট্রাকের চাপায় দুলাভাই ও শ্যালকের করুন মৃত্যুর পর প্রত্যক্ষদর্শীদের এমন বর্ণনা ছিল। তাছাড়া ঘাতক ট্রাকটির চালক আল আমিন মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চাঁদাবাজির কারনে দ্রুত পালাতে গিয়ে মোটরসাইকেল আরোহিদের চাপা দেয় বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, শুক্রবার বিকেল থেকে শহরের বনবেলঘড়িয়া এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি শুরু করে নাটোর মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজশাহী থেকে নাটোরের দিকে একটি ট্রাক আসছিলো। এসময় ট্রাকটিকে মাদ্রক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সোর্সরা থামানোর জন্য রাস্তার মাঝ চলে আসে।
এসময় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণের লোকজন ট্রাকটির চালক আল আমিনের কাছে চাঁদা দাবী করে। কিন্তু চালক দিতে না চাওয়ায় ট্রাকটিতে হামলার করে তারা। এসময় ট্রাকটি দ্রুত ডানদিকে চলে যায়। এতে করে ট্রাকটি সামনের কাচ ভেঙ্গে যায়। এসময় নাটোর শহর থেকে ফায়সাল আহমেদ তার দুলাভাইকে মটর সাইকেল যোগে চন্দ্রকোলার দিকে যাচ্ছিলেন। বিপরিত দিক থেকে আসা ট্রাকটি চেপে যাওয়ার কারনে ট্রাকটির পেছেনের চাকায় পৃস্ট হন মটর সাইকেলে থাকা শ্যালক এবং দুলা ভাই। আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষনা করে।
এদিকে, দু’জন নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যদের ধাওয়া দেয়। এসময় তারা পালিয়ে যায়। পরে বিক্ষুদ্ধ জনতা প্রায় ২০ মিনিট নাটোর-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রাস্তা অবরোধকারীদের সরিয়ে দেয় এবং ট্রাকটি সহ এর চালক আল আমীন ও তার সহযোগীকে আটক করে নাটোর থানায় আনে।
থানায় আনার পর ঘাতক ট্রাকটির চালক আল আমিন এই প্রতিবেদকের সামনে পুলিশের কাছে পুরো ঘটনার বর্ননা দেন। এসময় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চাঁদা না দেওয়ার কারনে হামলা থেকে বাঁচতে দ্রুত গতিতে পালিয়ে যাওয়ার চেস্টা করলে এই ঘটনা ঘটে বলে স্বীকার করে তিনি।
তেবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর আলী প্রধান বলেন, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যানবাহন চেকিংয়ের নামে মাঝে মধ্যেই বনবেলঘড়িয়া বাইপাসে চাঁদাবাজি করে। কর্মকর্তারা দাঁড়িয়ে থেকে তাদের সোর্স দিয়ে চেকিং করে। অনেক সময় সোর্সরা সাধারণ মানুষদের হয়রানী এবং নারীদের যৌন নির্যাতন করে। এনিয়ে বিভিন্ন মিটিংয়ে একাধিকবার কথা বলেছি।
তিনি আরও বলেন, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যারা সোর্স তারাই সবাই নেশাখোর। সোর্সদের দিয়ে কোন বাহিনীর অভিযান চালানোর নিয়ম রয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই।
তবে বিষয়টি নিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করা হলে চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভারপ্রাপ্ত পরিদর্শক আব্দুর রউফ। তার দাবি ফাঁকা রাস্তায় ট্রাকটি মটর সাইকেলকে চাপা দিলে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এবিষয়ে নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ঝলমলিয়া হাইওয়ে পুলিশ সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। পরবর্তীতে মরদেহ নিহত স্বজনদের মাঝে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নাটোর জেলা পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, স্থানীয়দের কাছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে এই ধরনের
অভিযোগ শুনেছি। বিষয়টি যেহেতু হাইওয়ে পুলিশের মধ্যে পড়ে, সেকারনে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
