
আশিকুর রহমান টুটুল:
আমের পর এবার লিচুতে ফ্রুট ব্যাগিং শুরু হয়েছে নাটোরে। বানিজ্যিক ভাবে বিষমুক্ত নিরাপদ ফল উৎপাদন ও বিদেশে রপ্তানির উদ্দেশ্যে এবার জেলার লালপুরে ৫০ হাজার আম ও লিচুতে ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়েছে। উপজেলার বিজয়পুর গ্রামের চাষী কামরুজ্জামান লাভলু গত বছর তিনি ১০ বিঘা জমিতে ৩২ হাজার আমে ফ্রুট ব্যাগিং করে সফলতা পাওয়ার কারনে এবছর তিনি ১০ বিঘা জমিতে ৩৫ হাজার আম এবং ১৫হাজার লিচুতে ফ্রুট ব্যাগিং করেছেন। তবে চাষী কামরুজ্জামান লাভলুর দেখা দেখি বিষমুক্ত ফল উৎপাদনে অনেকেই এখন ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছেন।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, গত বছর লালপুর উপজেলায় আমে পরীক্ষামূলক ভাবে চীন থেকে আমদানিকৃত ৩২ হাজার ফ্রুট ব্যাগ আমে ব্যবহার করা হয়। আম্রপালি, খিরসাপাত, লক্ষণ ভোগ, ল্যাংড়া, ফজলি ও আশ্বিনা এসব জাতের আমে ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়েছিল। গত বছর সফলতা পাওয়ার কারনে এবার ৩২হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩৫হাজার আমে ফ্রুট ব্যাগিং হচ্ছে। তবে এবার ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে যুক্ত হয়েছে আরেকটি মৌসুমি ফল লিচু। বোম্বাই, চায়না-৩ জাতের ১৫ হাজার লিচুতে ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়েছে। আম ও লিচু গুলি ব্যাগের ভিতরে থাকায় কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে। এই পদ্ধতিতে আম ও লিচু নষ্টও কম হয় এবং উৎপাদিত আম ও লিচুর ফলনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বল্প খরচে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির মাধ্যমে মানসম্পন্ন আম ও লিচু উৎপাদন করে কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি মানবদেহ ও পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাবুই পাখির বাসার মতো গাছে গাছে সাদা ও হলুদ রং এর কাগজের ব্যাগ ঝুলছে। বাগানের ভিতরে গিয়ে দেখা যায় বাগান মালিক গাছের আম ও লিচু ব্যাগের ভিতরে প্যাকিং করছেন।
এসময় বাগানের মালিক কামরুজ্জামন বলেন,গত বছরে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শক্রমে ১০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের প্রায় ৩২ হাজার আম ফ্রুট ব্যাগিং করে বেশ সফলাতা পেয়েছি। সেই অভিজ্ঞতায় এবছর ৩৫ হাজার আম ও ১৫ হাজার লিচুতে ফ্রুট ব্যাগিং করছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘চীন থেকে আমদানিকৃত এই ব্যাগ গুলি সাড়ে ৩ টাকা খরচ পড়েছে। ব্যাগগুলি দুইবার ব্যবহার করা যাবে। এই পদ্ধতি ব্যবহার করায় আম ও লিচুর বাগানে বর্তমানে আমাকে কোনো বাড়তি কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়নি। গত বছরের মতো এবছরও ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত আম ও লিচুর চাহিদা বেশি থাকায় দেশ ও দেশের বাহিরে রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানির প্রক্রিয়া চলছে।’
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, আম ও লিচু চাষী কামরুজ্জামান লাভলু গত বছর থেকে এই উপজেলায় ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম উৎপাদন শুরু করেছেন। গত বছর সফলতা পাওয়ায় এবছর তিনি প্রায় ৫০ হাজার আম ও লিচুতে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন। বিষমুক্ত নিরাপদ ফল উৎপাদনে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির প্রসার ঘটাতে উপজেলা কৃষি বিভাগ হতে কৃষকদের সব রকম পরামর্শ ও সহায়তার উদ্যেগ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
