
বিশেষ প্রতিবেদক:
প্রতিষ্ঠার ৩৭ বছর পরও গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে পারেনি নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১। শতভাগ বিদ্যুতায়নের পাশাপাশি দিন দিন নতুন লাইনের সংখ্যা বাড়লেও গ্রাহক সেবা রয়ে গেছে সেই আগের মতই। তাছাড়া নতুন লাইন যত বাড়ছে ততই বাড়ছে ভোগান্তির পরিমান। একটু ঝড়-বৃষ্টি হলেই ঘন্টার পর ঘন্টায় বিদ্যুৎ বঞ্চিত থাকতে হয় গ্রাহকদের। এরই মধ্যে বেশ কিছু উপজেলায় লোডশেডিং শুরু হয়েছে। তবে আপগ্রেশন লাইন তৈরী হলে কোয়ালিটি বিদ্যুতের পাশাপাশি শতভাগ গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে স্বীকার করেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার।
এই তো নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কথা। একই অবস্থা বনপাড়ায় অবস্থিত নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর। পর্যাপ্ত গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে না পারার কারণে দিন দিন গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তষ বেড়েই চলছে।
তবে ভোক্তা সংগঠণগুলো বলছে, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সক্ষমতা না বাড়িয়ে শুধু লাইন সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। অনেকটা ব্যবসা কেন্দ্রিক মনোভাবের কারনে সঠিক এবং পর্যাপ্ত গ্রাহক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীরা।
গ্রাম পর্যায়ে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করতে ১৯৮১সালে নাটোর শহরের ফুলবাগান এলাকায় স্থাপিত হয় নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১। বর্তমানে নাটোর সদর, সিংড়া, বাগাতিপাড়া, নলডাঙ্গা এবং রাজশাহীর পুঠিয়া ও বাগমারা এই ৬টি উপজেলায় ৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে সমিতিটি। এরই মধ্যে ৪টি উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়ন ঘোষনা করা হয়েছে। ১’হাজার ২৭৪টি গ্রামের ৬হাজার কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করে ৩লাখ ৭০হাজার গ্রাহককে বিদ্যুতের আওতায় এনেছে সমিতিটি।
সূত্র জানায়, বর্তমানে মোট ৪৫৫জন জনবল দিয়ে চলছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিটি। ৩টি জোনাল, ৩টি এরিয়া এবং ১২টি অভিযোগ কেন্দ্রের মাধ্যমে গ্রাহক সেবা দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে প্রতিষ্ঠার ৩৭ বছরেও পুরোপুরি ভাবে গ্রাহক সেবা দিচ্ছে পারছেনা সমিতিটি। ঝড় বা বৃষ্টি হলেই ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ বিহীন থাকতে হয় গ্রাহকদের। তাই তো সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গ্রাহকরা।
সিংড়া উপজেলার গণমাধ্যম কর্মী আবু জাফর জানান, গত ২৬ মার্চের দিন সারা দিনে ১০/১৫ বার বিদ্যুৎ আসা যাওযা করেছে। বিদ্যুৎ আসার পর মাত্র দুই মিনিট স্থায়ী থেকে আবারও চলে যায়। যার কারনে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের।
সাইফুল ইসলাম নামে পল্লী বিদ্যুতের এক গ্রাহক বলেন, গত এক বছর ধরে তাদের আপগ্রেশনে লাইনের জন্য দিনের পর দিন বিদ্যুৎ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় জনবল দিয়ে কাজ না করানোর কারনে কাজের মেয়াদ দীর্ঘ হচ্ছে। এতে করে দীর্ঘ সময় ধরে লাইন বন্ধ থাকায় ভোগান্তির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির শিকার হতে হচ্ছে গ্রাহককে।
জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন কমিটির সাধারণ সম্পাদক রইচ উদ্দিন বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তাদের যে লক্ষ্য উদ্দ্যেশে নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল, সেটার বাস্তবে প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি। তারা দীর্ঘ দিনও গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে পারেনি। সামান্য ঝড় বৃষ্টি হলেই ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকেনা। যার কারনে জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন জরুরী।
তিনি আরও বলেন, পল্লী বিদ্যুতের সব চেয়ে বড় সমস্যা বিদ্যুৎ ব্যবহারের সাথে তাদের বিলের সমন্বয় থাকেনা। এক মাসে এক রকম তো অন্য মাসে আরেক রকম। আকাশ পাতাল ফারাক থাকে। যার কারনে অনেক সময় গ্রাহকের বিশ্বাস অর্জন করতে বেগ পেতে হয় প্রতিষ্ঠানটির।
এবিষয়ে নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার সোহরাব হোসেন বলেন, গ্রাহকদের নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে ৫৬৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সমিতিটি। ১১০০ কিলোমিটার লাইন এবং উপকেন্দ্র গুলো কে আপগ্রেডেশন করার জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে আপগ্রেডেশন প্রকল্প সম্পন্ন হলে স্মার্ট বিদ্যুতের পাশাপাশি নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হবে।
তবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সক্ষমতা বাড়িয়ে শতভাগ বিদ্যুৎ সেবা দিতে পারলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
