Home মুক্তমত নাটোর শহরে উন্নয়ন কাজের নামে জনভোগান্তি আর কতদিন ?

নাটোর শহরে উন্নয়ন কাজের নামে জনভোগান্তি আর কতদিন ?

691
0

রাজা-রাজণ্যের স্মৃতিধন্য বনলতা সেনের প্রাচীন শহর নাটোর। দেশের একটি অবহেলিত জেলা শহর। তাই বিশেষ শ্রেনীর নাটোর পৌরসভার উন্নয়নের পক্ষে দলমত নির্বিশেষে আমরা সবাই একমত। ২০১৭ সালের ৭ অক্টোবর শুক্রবার নাটোর -২ আসনের সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুল ভাই শহরের প্রধান সড়ক চার লেন করার কাজের উদ্বোধন যেদিন করলেন, সেদিন পুরো নাটোরবাসী সাথে আমরাও খুশি হয়েছিলাম । কৃতজ্ঞচিত্তে শিমুল ভাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ছিলাম । তাঁর মাধ্যমে নাটোরবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন যেমন পূরণ হচ্ছে, তেমনি প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে।

শিমুল ভাই এতো বড় উন্নয়ন কাজ শুরু করাই জনগণের মধ্যে তাঁর একটি শক্তিশালী অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে । শিমুল ভাইয়ের সেই ইতিবাচক উন্নয়ন কাজটি আজ ঠিকাদারদের খামখেয়ালীপনার জন্য নেতিবাচক ভোগান্তিতে রুপ নিয়েছে ।মাসের পর মাস পুরো শহরের প্রধান সড়ক খোঁড়াখুড়ি করে রেখেছে। নানা অজুহাতে কালক্ষেপন করছে ।পুরো শহর ধূলিময় । উন্নয়ন কাজের শম্বুক গতি আজ স্থায়ী নাগরিক ভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে । এ কাজের ঠিকাদার সাহেবরা তো গাড়ীর কাঁচ তুলে এসি চালিয়ে যাতায়াত করে ।উনাকে ধূলোবালি স্পর্শ করেনা ।। তাই আমজনতার কষ্ট তাদের স্পর্শ করেনা । জনগণ বাঁচুক মরুক তাদের কিছু আসে যায়না ।আপনি শিমুল ভাই কিন্তু জনতার প্রতিনিধি ।জনগণের চাওয়া পাওয়া আপনার কাছে ,তাদের কাছে নয় । তাই আপনাকেই ব্যবস্থা নিতে হবে । কারণ, সত্য কথাটি হচ্ছে এই ঠিকাদারদের খামখেয়ালীপানার জন্য আপনার ইমেজ নষ্ট হচ্ছে । আপনার ইমেজে অবশ্য তাদের কিছু যাই আসেনা ।তাদের দরকার টাকা । যতদেরিতে কাজ উঠবে তত বেশি টাকা লাভ হবে । জণগণ মরুক বাঁচুক তাদের কি ? জনগণের কাছে তো আপনাকে যেতে হবে শিমুল ভাই। জনগণের ম্যান্ডেট তো আপনার দরকার । তাদের নয় ।

আমার জানামতে শিমুল ভাই ঠিকাদারদের একাধিক বার তাগাদা দিয়েছেন কাজ শেষ করার জন্য । কিন্তু কেন তারা করছে না । প্লীজ ভাই বিষয়টি খতিয়ে দেখুন ।। হয়তো আপনার মুখের সামনে বলছে না বা বলার সাহস পাচ্ছে না । একটু খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন ।শহরের নানা শ্রেনী পেশার মানুষ কতটা তিক্ত বিরক্ত । তারা কি বলছে ? তারা এ অবস্থা থেকে মুক্তি চাই । আর মুক্তির দিশারী বর্তমানে আপনি ?

শহরে শম্বুকগতিতে রাস্তার উন্নয়ণ কাজ চলায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ পরেছে ভোগান্তিতে।তাই ধুলাবালুর জন্য ভালো করে দেখা যাচ্ছে না কিছু।পুরো সড়ক ধুলায় ধূসর। একটি গাড়ি যাওয়ার পরেই পেছনে ধুলায় আর কিছু দেখা যায় না। এর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রাক, বাস ও অটোরিকশা। এরই মধ্যে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে সড়ক পার হচ্ছেন একজন। এসব অসতর্কতার কারণে সড়কে প্রায় সময় ঘটছে দুর্ঘটনা।

সেবার নামে শহরজুড়ে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির যে বাড়াবাড়ি চলছে, তাতে শহরবাসীর অবস্থা দাঁড়িয়েছে ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’র মতো। নাটোরবাসী অবশ্যই সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে মানসম্মত সেবা চান।উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কাজে সাময়িক ভোগান্তির শিকার হতেও তারা রাজি। কিন্তু তা যেভাবে স্থায়ী রূপ নিচ্ছে তা মেনে নেওয়া যায় না। এ অকাম্য অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নাটোর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কের পূর্ব বাইপাস থেকে পশ্চিম বাইপাস পর্যন্ত ৫ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার সড়ক ৪৮ ফুট প্রশস্ত করার কাজের উদ্বোধন করা হয়। ৪৮ ফুটের মধ্যে উভয় পাশে চার ফুট প্রশস্ত করে নালা (ড্রেন) হবে। নালার ওপরের অংশ পদচারী রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করা হবে। সড়কের মাঝে চার ফুট প্রশস্ত বিভক্তিকরণ (ডিভাইডার) প্রাচীর থাকবে। যার মধ্যে শোভাবর্ধনকারী গাছপালা রোপণ করা হবে। পাশাপাশি শহরকে আলোকিত করতে সোডিয়াম বাতি লাগানো হবে। ডিভাইডারের উভয় পাশে যান চলাচলের জন্য ১৮ ফুট করে পিচ কার্পেটিং সড়ক থাকবে। এর প্রতিটি অংশ ৯ ফুট প্রশস্ত করে দুটি করে লেন করা হবে। ফলে উভয় পাশ মিলে চারটি লেন হবে। এতে একসঙ্গে চারটি করে যানবাহন চলতে পারবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সরকার ইতিমধ্যে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। প্রয়োজনে আরও তহবিল দেওয়া হবে। ২০১৯ সালের জুন মাসের মধ্যে সড়কটি প্রশস্তকরণের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

জুন মাস চলছে এখনো উন্নয়ন কাজের অর্ধেকের কাজও শেষ হয়নি ।রাস্তার উন্নয়ন কাজের শম্বুক গতির কারণে জনভোগান্তি চরমে ।উন্নয়ন কাজের সমন্বয়হীনতার কারণে জনভোগান্তি যেন স্থায়ী রূপ নিচ্ছে। রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে মাসের পর মাস ধরে। শোনা যাচ্ছে চলতি বছর তা শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। শম্বুক গতিতে কাজ করার রেকর্ড স্থাপিত হতে যাচ্ছে এ প্রকল্পটির বাস্তবায়নে।এক বছর ধরেই শহর জুড়ে চলছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। বর্ষা মৌসুমে জনভোগান্তির সীমা অতিক্রম করেছিল খোঁড়াখুঁড়ির অপরিণামদর্শী কসরত। শুষ্ক মৌসুমেও অব্যাহত রয়েছে সে প্রক্রিয়া। যান্ত্রিক যানবাহনে যে পথ সাধারণ অবস্থায় ১০ মিনিটে অতিক্রম করার কথা, সে পথ পাড়ি দিতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ গুণ সময়ও লাগছে। উন্নয়ন কাজের সমন্বয়হীনতার কারণে জনভোগান্তি যেন স্থায়ী রূপ নিচ্ছে। ধুলায় দুর্বিষহ হয়ে উঠছে মানুষের জীবন।
নাটোরের বেশ কয়েকজন চিকিৎসক জানালেন,বায়ুদূষণ জনিত রোগ নাটোর শহরে মহামারী আকার ধারণ করেছে । হাঁচি,কাঁসি,শাসকষ্ট,এ্যাজমা,এলার্জী রোগীর সংখ্যা বাড়ছে ।

লেখক: নাসিম উদ্দিন নাসিম, সাংবাদিক

Previous articleসিংড়ায় কমিউনিটি পুলিশিং’র আলোচনা সভা
Next articleনাটোরে বেড়েছে হত্যাকাণ্ড: ৩ দিনে চার হত্যা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here