
নিজস্ব প্রতিবেদক:
নলডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ও পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম পিয়াসকে একক প্রার্থী করতে অপর কাউন্সিলর প্রার্থী আকরামুল ইসলাম দুদুর মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারে জোর করে স্বাক্ষর নিয়েছে জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ। এসময় দুদু মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারে রাজি না থাকায় জেলার নেতাদের অব্যাহত হুমকি আর চাপের কারনে স্টোক করেছেন তিনি। রাতেই দুদুকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রবিবার বিকেলে নলডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে এসব ঘটনা ঘটে। আকরামুল ইসলাম দুদু ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক। এদিকে, বেলা সাগে ১২টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নাটোর সদর হাসপাতালে তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছিল। তবে বেলা একটার সময় জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক দিলীপ কুমার দাস ও উপ দপ্তর সম্পাদক আকরামুল ইসলাম দুদুকে দেখতে হাসপাতালে যান।
দুদুর পরিবার জানায়, নলডাঙ্গা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড থেকে দুদুসহ ৭জন কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়নপত্র ক্রয় করেছেন। এদের মধ্যে নলডাঙ্গা পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম পিয়াসও রয়েছেন। তিনি একক দলীয় প্রার্থী হওয়ার জন্য দলের একজন নেতার কাছে তদবির করেন। দুদুকে ভোট না করতে ওই নেতা নির্দশ দেন। কিন্তু দুদু ভোট করার বিষয়ে অটল থাকেন।
দুদুর ভাই জাকির হোসেন জানান, রবিবার নলডাঙ্গা পৌর নির্বাচন নিয়ে নলডাঙ্গা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে জেলার নেতাদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভা শেষে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে আমার ভাই কাউন্সিলর প্রার্থী আকরামুল ইসলাম দুদুকে ডাকা হয়।
এসময় সেখানে জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, দপ্তর সম্পাদক দিলীপ কুমার দাস, উপ দপ্তর সম্পাদক ও এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের পিএস আকরামুল ইসলাম সহ স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনে পিয়াসকে একক প্রার্থী করার জন্য জেলার নেতারা আমার ভাইকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করতে বলে। কিন্তু তিনি নির্বাচন করার জন্য অটল থাকেন। এক পর্যায়ে জেলার নেতা সিরাজুল ইসলাম, পিএস আকরামুল ইসলাম এবং দিলীপ কুমার দাস মনোনয়ন পত্রে স্বাক্ষর করতে বিভিন্ন হুমকি দেন। পরে কাউন্সিলর প্রার্থী দুদুর কাছ থেকে জোর করে আবেদন পত্রে স্বাক্ষর করে নেওয়া হয়।
এসময় জেলার নেতাদের অব্যাহৃত চাপ সইতে না পেরে সেখানেই স্টোক করেন দুদু। পরে পিএস আকরামুল ইসলাম স্বাক্ষর করা আবেদন পত্র ফিরিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, তার ভাইয়ের অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে তাকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। এ অবস্থায় তাকে দ্রুত সেখান থেকে নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই । চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার প্রেসার অনেক হা্ই।
এদিকে, বেলা সাড়ে ১২টায় দুদুর বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা।
সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মঞ্জুরুর রহমান জানান, দুদু উচ্চ মানসিক চাপে থাকায় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসাসহ ঘুমের ঔষধ দিয়েছিল কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। পরীক্ষা নীরিক্ষা শেষে বলা যাবে রোগীর কি অবস্থা।
এবিষয়ে কাউন্সিলর প্রার্থী শরিফুল ইসলাম পিয়াস এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রচারনা। যে কোন মানুষ যেকোন সময় অসুস্থ হয়ে পড়তেই পারেন।
নাটোর জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক দিলীপ কুমার দাস বলেন, যেহেতু পিয়াস নলডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু নেত্রী তাকে দেয়নি, সেকারনে আমরা চেয়েছিলাম পিয়াস যেহেতু পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি, সেকারনে তাকে একক প্রার্থী করা যায় কিনা। সেকারনেই আমরা মনোনয়ণপত্র প্রত্যাহারের জন্য আকরামুল ইসলাম দুদু সহ জেলার নেতৃবৃন্দ বসে ছিলাম। তিনি মনোনয়নপত্র নিজ উদ্যোগেই স্বাক্ষর করেছে, তাকে কোন হুমকি বা চাপ প্রয়োগ করা হয়নি। পরে আবার তার স্বাক্ষর করা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন ফেরত দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, দ্বিতীয় দফার পৌর নির্বাচনে আগামী ১৬জানুয়ারী ইভিএমে ভোটগ্রহন অনুষ্ঠিত হবে নলডাঙ্গা পৌরসভায়। আগামীকাল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।
