Home শিরোনাম ফতোয়া দিয়ে নিরহ পরিবারকে ‘একঘরে’

ফতোয়া দিয়ে নিরহ পরিবারকে ‘একঘরে’

468
0
ফতোয়াবাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, গুরুদাসপুর:
সামাজিক ফতোয়া দিয়ে একটি অসহায় পরিবারকে একঘরে করে রাখার অভিযোগ উঠেছে গ্রাম্য মাতব্বরদের বিরুদ্ধে। গেল দুই দিন ধরে অমানবিক জীবন যাপন করছে পরিবারটি। এমন ঘটনা ঘটেছে জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের দেবোত্তর গরিলা গ্রামে।

গত ১৩জুন বাদ আছর পাশের রানীনগর মোল্লাপাড়া মসজিদের ইমাম মাওলানা নুরুজ্জামান (৫৫) মসজিদে বসে একঘরে করার ফতোয়া জারি করেন। এসময় গ্রাম্য মাতব্বর ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মোসাব্বের আলীসহ গ্রামের ৬০-৭০জন উপস্থিত ছিলেন।

ফতোয়ার শিকার পরিবারের এক নারীর (৫০) সাথে তাঁর মেয়ে জামাইয়ের (৩৬) অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ এনে ফতোয়া দিয়ে একঘরে রাখার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন গ্রাম্য মাতব্বররা। একই সাথে ওই নারীর মেয়েকে (৩০) তার স্বামীর পরিবার থেকেও বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। মেয়েটি এখন মায়ের সাথে অবস্থান করছেন।

গ্রাম্য মাতব্বরদের আনা অভিযোগ অস্বীকার করে ভুক্তভোগী ওই নারী (৫০) বলেন, মেয়ে জামাই তার সন্তানের মত। বেশ কিছুদিন আগে তার ভাইয়ের কাছ থেকে এক লাখ টাকা ধার করে মেয়ে জামাইকে দিয়েছিলেন।

গত সোমবার সন্ধ্যার পর ধারের টাকা পরিশোধ করে জামাইকে সাথে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি।
রাত ৮টার দিকে রানীনগর মোল্লাপাড়ার একটি পুকুরপাড় দিয়ে ফেরার সময় একই গ্রামের শুকচাঁদ আলী ,কামরুল ইসলাম, আতহার হোসেন ও আলামিন নামে চার যুবক তাদের পথরোধ করে। অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ এনে তাঁদের (জামাই-শ্বাশুরী) বেঁধে শারীরিক নির্যাতন করা হয়।

এক পর্যায়ে তাদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা চাঁদাদাবী করে ওই চার যুবক। চাঁদার টাকা দিতে অপারগতা জানালে গ্রামের লোকজন ডেকে এনে গ্রামে নিয়ে যায় তারা। জামাই-শ্বাশুরীকে জড়িয়ে অপপ্রচার চালানোর পর রাত ১২ টার ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের।

অনৈতিক সম্পর্কের অজুহাতে মেয়ে জামাইসহ তাকে বেধড়ক মারপিটসহ শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। জামাইকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার মেয়েকে জোর করে তার বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। এনিয়ে পুলিশকে কোন অভিযোগ না দেওয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। নিজেদের নিরাপত্তার কারনে থানায় অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছেনা তারা।

সর্বশেষ গত শনিবার (১৩ জুন) গ্রাম্য মাতব্বর মো. ওসমান আলী, রমজান আলী, মকছেদ আলী ও ইউপি সদস্য মোসাব্বের আলী যোগসাজশ করে রানীনগর মোল্লাপাড়া মসজিদের সামাজিক বিচার বসান।

রানীনগর মোল্লাপাড়া মসজিদের ইমাম মাওলানা নুরুজ্জামানকে সেখানে উপস্থিত করেন তাঁরা।
সামাজিক বিচারে শ্বাশুরী-জামাইকে উপস্থিত রেখে শরীয়ত পরিপন্থী অপরাধের জন্য তওবা পড়ান ইমাম নুরুজ্জামান। শ্বাশুরী-জামাইয়ের অনৈতিক সম্পর্কের কারনে তাদের মেয়ে আর স্ত্রী নয় বলে ফতোয়াদেন ওই মাওলানা। এর পর থেকে স্বামীর ঘর ছেড়ে মায়ের বাড়িতে অবস্থান করছে মেয়ে।

গ্রাম্য মাতব্বরদের হুমকী ও ভয়ভীতির কারনে সামাজিক বিচারে প্রতিবাদ করার সাহস পাইনি। একতরফা ভাবে রায় ও সামাজিক ফতোয়া দিতে অবিচার করা হয়েছে তাদের ওপর। অথচ শ্বাশুরী ছেলেরমত দেখতেন তাঁকে। ফতোয়া দিয়ে তার স্ত্রীকে আলাদা করা হয়েছে। আইনের আশ্রয় না নেওয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ফতোয়ার কারনে ২০ বছরের সংসার ভাঙতে বসেছে। জানালেন অভিযুক্ত জামাতা।

ভুক্তভোগী নারীর মেয়ে বলেন, ১৫ ও ২ বছরের দুই ছেলে রয়েছে। সুখের সংসার। কিন্তু তার মাকে ঘিরে মিথ্যা অভিযোগ এনে সংসার তছনছ করে দিচ্ছে গ্রামের কিছু মাতব্বর। ভাঙতে বসেছে তাদের ২০ বছরের সংসার। ফতোয়ার কারনে হাটবাজারে কিংবা বাড়ির বাইরে পর্যন্ত বের হতে পারছেনা তাঁরা। এই অন্যায় ফতোয়াবাজির সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবী করেন তাঁরা।

জামাই-শ্বাশুরীদের অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে ইউপি সদস্য মোসাব্বের আলী, আলামিন হোসেন বলেন, গ্রাম্য শালিশ বসিয়ে তাদের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। মসজিদের মাওলানা ইসলামী শরীয়া মোতাবেক সিদ্ধান্ত দিয়েছে। গ্রামের মাতব্বরদের সমর্থন রয়েছে ওই সিদ্ধান্তের প্রতি। পরে বিষয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে।

ফতোয়া সম্পর্কে মাওলানা নুরুজ্জামান বলেন, ‘ ইসলামী দৃষ্টিতে জামাই-শ্বাশুরীর মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক থাকলে স্ত্রী সম্পর্ক থাকেনা। গ্রামবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই ফতোয়া দিতে বাধ্য হয়েছি। তবে জামাই শ্বাশুরীকে নির্যাতের বিষয়টি জানায়নি গ্রামের মাতব্বররা।

নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শওকতরানা বলেন, বিষয়টি থানার ওসিকে মুঠোফোনে জানিয়েছিলেন তিনি।

গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাহারুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, এ নিয়ে কেউ অভিযোগ দেওয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Previous articleনাটোরে সন্ত্রাসীর হাতে জিম্মি একটি পরিবার
Next articleবড়াইগ্রামে ট্রাক উল্টে অটো ভ্যানের ওপর: স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here