
বুলু বেগম, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর ইউনিয়নের পারকোল গ্রাম থেকে এসেছেন নাটোর শহরের স্বর্ণকার পট্টি এলাকায়। পথের ধারে বসেছেন পদ্মফুল বিক্রি করতে।
তার বাড়ির পাশেই সু-বিশাল সেই চিনি ডাঙার পদ্মবিল, সকালে পদ্মফুল তুলে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে নাটোরে শহরে পদ্মফুল বিক্রি করতে এসেছেন। মলিন বদনে তার পরিধানে দারিদ্রতার কষাঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট।
স্বামী জেলে, মাছ ধরে, একসময় সারা বছর মাছ আর পদ্মফুল পাওয়া যেত বিলে,বর্তমানে বিলের অনেকাংশেই সারা বছর পানি থাকে না তাই মাছ আর পদ্মফুলের পরিমাণ গেছে কমে, ফলে আয়ের উৎস কমে গেছে, দুই ছেলে আর এক মেয়ের জননী তিনি।
মেয়েটার বিয়ে দিয়েছে আর ছেলেটা বিয়ে করে পর হয়েছে, পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছেলে আর স্বামী নিয়ে, তিনজনের সংসার।
আজ সকালে প্রায় দেড়শত পদ্মফুল বিল থেকে তুলে ৩২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে এসেছেন নাটোর শহরে।
একটি পদ্ম ফুলের দাম তিন টাকা সব পদ্ম ফুল বিক্রি হলে রোজগার হবে চারশত পঞ্চাশ টাকা যাতায়াতের খরচ বাবদ ব্যয় হবে প্রায় একশত টাকা অবশিষ্ট থাকবে তিনশত পঞ্চাশ টাকা। সবগুলো বিক্রি হবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই, যাই হোক যতটুকুই আসুক সংসার চালাতে অনেকটাই যোগান দিবে এই অর্থ। কিন্তু এই আয় তো সারা বছরের জন্য নয়, তাই বুলু বেগমের মনের প্রশ্ন শারদীয় দূর্গা উৎসব তুমি প্রতিদিন হওনা কেন?
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর ও মাঝগাঁও ইউনিয়নের পারকোল,মাজগাঁও, মহানন্দাগাছা গ্রামে খোঁজ করলে এমন কয়েকশত বুলু বেগমের সাথে দেখা হতে পারে। অথচ একদল আয়নার থাবায় কমছে বিলের আয়তন বেকার হচ্ছে শত পরিবার কমছে জলাশয় খরা মৌসুমে প্রভাবশালীরা দখল করে, করছে চাষাবাদ অধিক পরিমানে ব্যবহার করা হচ্ছে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার অনেক স্থানে অবৈধভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু, খনন করা হচ্ছে পুকুর।
আসুন না দেখে আসি নাটোরের সেই চিনি ডাঙ্গার পদ্মবিল, পাখির অভয়াশ্রম, উদ্যোগ গ্রহন করি কিভাবে হায়নার থাবা থেকে বিলটি রক্ষা করা যায়, কিভাবে ফিরিয়ে দেওয়া যায় বুলু বেগমের মতন শত পরিবারের প্রতিদিনের কর্মসংস্থান।
লেখকঃ খন্দকার মাহাবুবুর রহমান, গণমাধ্যম কর্মী।
