
আমার জন্ম হয়েছিল শুক্রবারের কোন এক অশুভ তিথিতে।
বড় ঘটা করে খাসি মেরে দোয়া মাহফিল করে নাম রাখা হয়েছিল আমার।
ছেলে আমার বড় হবে, মানুষ হবে, উজ্জল করবে বাবা মায়ের মুখ।
তাই বুকের রক্ত পানি করে কঠোর পরিশ্রম করে আমাকে এমএ পাশ করিয়েছেন।?
আমি এখন ঢাকায় থাকি, চাকুরী নেই।ম্যাসভাড়া দিতে না পারায় বের করে দেয়া হয়েছে আমাকে
কয়েকদিন এ বন্ধু ও বন্ধুর আশ্রয়ে থেকেছি
ধার করে ফেলেছি বিস্তর।
পাওনাদারদের ভয়ে এখন আমি পালিয়ে বেড়াই।
পায়ের সেন্ডেলজোড়াও ছিড়তে শরু করেছে
পরনের সার্ট প্যান্টের রং চটেছে, ছিড়তেও শুরু করেছে কোথাও কোথাও।
দাড়ি কাটবার পয়সা নেই তাই ও ঝামেলা মিটিয়েছি দাড়ি রেখে
চাকুরীর জন্য দরখাস্ত করার টাকাও নেই আমার।
সরকারী চাকুরীর আশা ছেড়ে দিয়েছি আগেই কারণ ওখানে চাকুরী হতে হলে মামা, দুলাভাই লাগে।
ওসবের বালাই নেই আমার। তাইতো আমার সিটের ব্যাক ব্যাঞ্চাররা মামা দুলাভাই আর টাকার জোড়ে এখন অফিসার।
দশটা পাচটা অফিস তাদের,চকচকে গাড়ী আর উপড়ি পাওনার বদৌলতে ফুলে ফেপে উঠছে সবাই।
আমি অদৃষ্টের পরিহাস নিয়ে ছুটে চলেছি এ অফিস সে অফিস।
একটি সওদাগরি অফিসে লিখিত পরীক্ষার পর ভাইভায় ডাকা হয় আমাকে
তারা রেফারেন্স চান, কোথায় রেফারেন্স পাব আমি চাকুরীটা আমার হয়নি।
আমি এখন উদ্দেশ্যহীন ভবঘুরে
থাকার জায়গা নেই খাবার টাকা নেই
জীবন এখন আমার কাছে বোঝা।
বাবা চেয়েছিলেন ছেলে আমার জজ ব্যারিস্টার হবেন,
এখন আমার দিন কাটে অনাহারে অর্ধাহারে।
এখন আমার একটাই পরিচয় আমি বেকার।
সমাজ সংসারে কোথাও জায়গা নেই আমাদের।
আমাদের জন্য দায় নেই সরকারের রাষ্ট্রের।
আছে শুধু মিথ্যে কথার ফুলঝুরি।
মিছেই ওরা বলে আমরা ক্ষমতায় গেলে কোন অভাব থাকবেনা, থাকবেনা বেকারত্ব।
তারপর ভোট হয়, নতুন সরকার গঠন হয়
কিন্তু আমাদের মত বেকাররা বেকারই থাকে,সংখ্যা বাড়তেই থাকে এক কোটি দু কোটি করে ৫ কোটি ।
আচ্ছা আমরা বেকাররাই তো দল বানাতে পারি
আমরাই যেতে পারি রাষ্ট্র ক্ষমতায়
দুর কি সব ভাবছি ছেড়া কাথায় শুয়ে রাজ্য জয়ের স্বপ্ন।
কদিন আগে বাবার লেখা একটা চিঠি পেয়েছিলাম
বাবার শরীরটা ভাল নেই, ছোট বোনটার বিয়ে
অনেক টাকার দরকার আমি যদি পারি…..
জানি বড় আশা নিয়ে বাবা লিখেছেন এ চিঠি
কিন্তু তারা কি জানে তাদের ছেলে এখন উদ্বাস্তু
বাবা মায়ের দিকে চেয়ে গেলাম এক ধনী বন্ধুর কাছে
সব শুনে দয়াপরবশ হয়ে দিলে ৫ হাজার টাকা
আর বললে তোকে এ টাকাটা দিতে হবেনা তুইতো এখন বেকার।
আমার ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে যায়, চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে হ্যা আমি বেকার কিন্তু তোদের মত ঘুষখোর নই
কিন্তু কিছুই বলা হয়না আমার, মাথাটা নিচু করে বেরিয়ে আসি আলিশান বাড়ি থেকে।
আজকাল মাঝে মধ্যে প্রতিবাদী হয়ে উঠতে ইচ্ছ করে
চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে লড়াই, লড়াই,লড়াই চাই, বাঁচার মত বাঁচতে চাই।
কিন্তু কিছুই করা হয়না আমার।
মুখের সামনে জ্বল জ্বল করে ভেসে উঠে
বাবা মায়র ব্যাথাতুর মুখ,ঔষধ ডাক্তার আরো কত কত কি।
এভাবেই কাটছে আমাদের জীবন
বোবা কান্নার পথ বেয়ে অতলান্ত সাগরে।
