Home শিরোনাম বড়াইগ্রামে স্কুল সংস্কারের ১৬লাখ টাকা তুলে নিল প্রকৌশলী ও ঠিকাদার (ভিডিও সহ))

বড়াইগ্রামে স্কুল সংস্কারের ১৬লাখ টাকা তুলে নিল প্রকৌশলী ও ঠিকাদার (ভিডিও সহ))

552
0

মাহবুব হোসেন ও নাজমুল হাসান:
নাটোরের বড়াইগ্রামে তিনটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। নামমাত্র কাজ করেই ঠিকাদার তুলে নিয়েছে ১৬লাখ টাকা।

এই ঘটনায় সম্প্রতি নিজ কর্মক্ষেত্র থেকে অন্যত্র বদলি (স্ট্যান্ড রিলিজ) করা হয় অভিযুক্ত এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী আহসান হাবিবকে। বর্তমানে তিনি মিরসরাই উপজেলা প্রকৌশলী হলেও তার আগে অনিয়মের কথা স্বীকার করেন তিনি।

অভিযুক্ত প্রকৌশলী

সূত্র জানায়, বড়াইগ্রামের চামটা সরকারী প্রাথমকি বিদ্যালয়ের জন্য ৫লাখ ৫০হাজার, রামেশ্বরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য সাড়ে ৪লাখ টাকা এবং নারায়নপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মেরামত ও সংস্কার কাজের জন্য ৬লাখ টাকা সহ মোট ১৬ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়।

২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ‘তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসুচি’ প্রকল্পের আওতায় এই টাকা বরাদ্দ দেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। পরবর্তীতে ই-টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি পায় স্থানীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আঁখি এন্টারপ্রাইজ। কিন্তু নামমাত্র কাজ করেই  ২০১৮ সালের এপ্রিলে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে পুরো টাকা উত্তোলন করা হয়। আর এই কাজে সহযোগিতা করেন সদ্য বদলি হওয়া উপজেলা প্রকৌশলী আহসান হাবিব।

এনিয়ে চামটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি বুলবুল আহমেদ সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন।

এবিষয়ে চামটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি বুলবুল আহমেদ বলেন, বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য সাড়ে ৫লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রকৌশলী ও ঠিকাদার মিলে পুরো টাকা আত্মসাৎ করেছে। পরে আমি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। এরপর যত সামান্য কাজ করেছে ঠিকাদার। নিয়ম অনুযায়ী কোন কাজই ঠিকমত করেনি তারা।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, তিনটি বিদ্যালয়ে নামমাত্র সংস্কার করে পুরো টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে, যেটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্মকর্তার তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। সরকারী টাকা যারা আত্মসাৎ করেছে তাদের বিচার দাবী করছি।

এ বিষয়ে আঁখি কন্সট্রাকশন এর ঠিকাদার আহসান হাবিব বাবু ও রোকন উদ্দিনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

জরাজীর্ণ বিদ্যালয় ভবন।

এদিকে, ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর সম্প্রতি নিজ কর্মক্ষেত্র থেকে অন্যত্র বদলি (স্ট্যান্ড রিলিজ) করা হয় অভিযুক্ত এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী আহসান হাবিবকে। বর্তমানে তিনি মিরসরাই উপজেলায় দায়িত্বে রয়েছেন। তবে এর আগে তিনি অনিয়মের কথা স্বীকার করে বলেন, অর্থ বছর শেষ হওয়ার কারনে কিছু কাছ বাঁকি রেখে ঠিকাদার টাকা তুলে নিয়েছে। তবে বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শন করে আমি ঠিকাদারকে সকল কাজ সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। নিয়ম মেনেই ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করা হয়েছে। কোন অনিয়ম হয়নি।

অপরদিকে, কর্মসূচির আওতায় বিদ্যালয়ের মেরামত কাজ ঠিকমতো হয়েছে কিনা তা সরেজমিনে গিয়ে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এবিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এরশাদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী আমাদের চিঠি পাঠিয়ে বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিতে বলেছে। আমরা অতিদ্রুত পরিদর্শন করে সে প্রতিবেদন দাখিল করবো।

তবে সংস্কার কাজে যে অনিয়ম হয়েছে এটা শতভাগ প্রমানিত। আমরা এলজিইডিকে কাজটি পুনরায় করার জন্য ঠিকাদরকে নির্দেশের জন্য চিঠি দিবো।

বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার পারভেজ বলেন, ইষ্টিমেট অনুযায়ী বিদ্যালয় তিনটিতে কাজ হয়নি। আমি বিষয়টি জানার পর প্রকৌশলীকে ইষ্টিমেট অনুযায়ী কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। তাছাড়া ঠিকাদারের যে জামানত রয়েছে, সেটি বাজেয়াপ্রাপ্ত করে সংস্কার করা হবে। পাশাপাশি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

নাটোর জেলা দুর্ণীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দৃশ্যমান এই ধরনের দুর্নীতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার দায় এড়াতে পারেন না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছে, সেখানে কিছু কর্মকর্তা দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের সংস্কার করা টাকা আত্মসাতের জড়িত যারা তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার দাবী করছি।

তবে দৃশ্যমান এই অনিয়ম-দূর্ণীতির সাথে জড়িতদের শাস্তির আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করার জোর দাবী জানিয়েছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সজাগ/এমএইচ

Previous articleকড়া নিরাপত্তায় রাজশাহীর আদালতে সাঈদী
Next articleদূর্নীতির অভিযোগ করায় কৃষকের সবজি ক্ষেত কর্তন!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here