Home শিরোনাম ভাইরালের পর চাপে ছিলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী দম্পতি

ভাইরালের পর চাপে ছিলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী দম্পতি

121
0
অসম প্রেম ও বিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোরে কলেজ ছাত্রকে বিয়ে করে ভাইরাল হওয়া গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর মোজাম্মেল হক ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক খায়রুন নাহার আত্মহত্যা করেছেন।

রোববার ভোররাতে নাটোর শহরের বলারীপাড়ার ভাড়া বাসায় তিনি আত্মহত্যা করেন। এই ঘটনায় স্বামী মামুনকে আটক করেছে পুলিশ। মামুন-নাহার দম্পতি নাটোর শহরের বলারাীপাড়ার হাজী নান্নু মোল্লা ম্যানশনের চারতলায় ভাড়া থাকতেন। ২০২১সালের ১২ডিসেম্বর তারা গোপনে বিয়ে করে বলারীপাড়া ভাড়া বাসায় থাকতেন তারা।

পুলিশ ও ভবনের বাসিন্দারা জানায়, রাত দুইটার দিকে কলেজ শিক্ষিকার স্বামী মামুন বাড়ির বাহিরে যায়। এসময় মামুন তার স্ত্রী খুবজিপুর ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক খায়রুন নাহাকে বারবার ফোনে কল দিলে সে ধরেনা। পরে মামুন বাসায় ফিরে এসে কলেজ শিক্ষিকাকে গলায় ওড়না পেচিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে থাকতে দেখে।

এসময় স্বামী মামুন ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ নিচে নামিয়ে আনে। পরে বাসার মালিক ও লোকজন খায়রুন নাহারের লাশ মেঝেতে শোয়া অবস্থায় দেখতে পেয়ে সন্দেহ হয়। পরে বাড়ির মালিকের ছেলে কলেজ শিক্ষিকার স্বামী মামুন কে বাসার মধ্যে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেয়। সকাল ৯টার দিকে পুলিশ গিয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করে।

ভাড়া বাসার দারোয়ান নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘রাত ১১টায় বাসায় ঢোকেন মামুন। আবার আড়াইটার দিকে বের হন। এ সময় কেন বের হচ্ছে জানতে চাইলে মামুন বলেন, ওষুধ কিনতে যাচ্ছেন। পরে সকাল ৬টায় মামুন আবার ফিরে আসেন। এরপর তিনি আমাকে ডাকেন। আমি চার তলায় গিয়ে দেখি লাশ সিলিং ফ্যান থেকে নামানো। পরে বাসার মালিকদের বিষয়টি জানাই।

এদিকে, খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে জেলা পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা, পিবিআই পুলিশ সুপার শরিফ উদ্দিন সহ অন্যরা।

পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, সবার আড়ালে তাদের অসম প্রেমের পর বিয়ে নিয়ে সুখেই সংসার করছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তাদের অসম প্রেম এবং বিয়ে নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হয়। এরপর থেকেই তারা পরিবার ও সামাজিক ভাবে চাপে ছিলেন। মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ার কারনে কলেজ শিক্ষিকা আত্মহত্যা করে থাকতে পারে। প্রাথমিক ভাবে আমরা তার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছি। পরবর্তীতে ময়নাতদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।

এদিকে, খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে ছুটে আসা কলেজ শিক্ষিকার চাচাতো ভাই সাবিরুল হোসেন বলেন, তাদের বিয়ের খবর আমরা ভিডিওতে দেখেছি। বেশ কয়েক দিন আগে আমার মেয়ের কাছে ফোন করে খায়রুন নাহার তাদের বিয়ে মেনে নিতে বলেন। সকালে একাট ফোনে খায়রুন নাহারের মৃত্যুর খবর পাই। এসে দেখি বোনের মরদেহ মেঝে পড়ে আছে। মরদেহের গলায় বেশ কিছু দাগ রয়েছে। এতে মনে হচ্ছে ঘটনাটি আত্মহত্যা নয় পরিকল্পিত খুন। আমরা এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।’

ছয় মাসের প্রেমের পর স্বামী পরিত্যক্তা এক ছেলের জননী খায়রুন নাহার গত বছরের ১২ ডিসেম্বর কাজী অফিসে গিয়ে দুজন গোপনে বিয়ে করেন। বিয়ের ৬ মাস পর গত জুলাই মাসে ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে বেশ আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সারাদেশের সচেতন মানুষ ছাত্রকে শিক্ষিকার বিয়ের পক্ষে ও বিপক্ষে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে হাজারো মন্তব্য করেন। তবে তখন বর ছাত্র মামুন জোরালো ভাবে বলতে থাকেন, ভালোবাসার কোনো বয়স নেই, মন্তব্য কখনো গন্তব্যে পৌঁছাতে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। তার এমন বক্তব্যও সারা দেশে ভাইরাল হয়। জীবনের শেষ নিঃস্বাশ পর্যন্ত এক সাথে থাকার অঙ্গিকার করা আলোচিত এই ছাত্র-শিক্ষিকা দম্পতির বিয়ের মাত্র আট মাসের মাথায় আত্মহত্যার মাধ্যমে পরি সমাপ্তি ঘটলো।

এর আগে শিক্ষিকা মোছাঃ খায়রুন নাহার জানিয়েছিলেন, আগের স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর তিনি মানসিক ভাবে খুব ভেঙ্গে পড়েছিলেন। দিনের পর দিন তিনি ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে থাকতেন। এর মধ্যেই এক বছর আগে ফেসবুকে তার সাথে কলেজ ছাত্র মামুনের পরিচয় হয়। মামুনের সাথে কথা বলে তিনি শান্তি অনুভব করেন। মামুন তার পাশে দাঁড়াতে চায়, সারা জীবন এক সাথে কাটাতে চায়। এরপর ৬ মাসে তাদের দুজনের মধ্য ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে দু’জন বিয়ের সিন্ধান্ত নেন। গত বছরের ১২ ডিসেম্বরে কাউকে না জানিয়ে গোপনে বিয়ে করায় ছেলের পরিবার মেনে নিলেও মেয়ের পরিবার থেকে বিয়ে মেনে নেয়নি। তাই নাটোর শহরে তারা ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।

 

Previous articleসাংবাদিক মাহাবুুবুর রহমান সন্ত্রাসী হামলার শিকার
Next articleনাটোরে যুব ও ছাত্র অধিকার পরিষদের মানববন্ধনে বাধা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here