
নাজমুল হাসান নাহিদ,গুরুদাসপুর
আষাঢ়-শ্রাবণ মিলে ঋতুকাল বর্ষা। আর বর্ষা মানেই মুশলধারে বৃষ্টি, চলনবিলের খালবিলে পানি থৈই থৈই করে ডুবে থাকা। এ যেন এক চিরচেনা দৃশ্য। অথচ আজ আষাঢ় মাসের ১৭ দিন পেরিয়ে গেলেও প্রকৃতিতে লাগেনি বর্ষাকালের ছোঁয়া। মাঝ বর্ষাতে বৃষ্টি না থাকায় চলনবিলে এবং খালে পানি নেই। তাই হতাশ চলনবিল অঞ্চলের জেলেরা।
পানি না থাকলে তারা মাছ ধরবে কিভাবে। হতাশাগ্রস্থ ভাবে চলনবিলের জেলেদের দেখা যায় বাড়িতে বসে বসে পানির অপেক্ষা করছে। কখন পানি আসবে,কখন মাছ ধরবে।
চলনবিল অঞ্চলের নদীতে জোয়ারের পানি থাকলেও নেই খাল-বিলে। তারপরও নেই বৃষ্টি। তীব্র তাপমাত্রায় জন-জীবন অতিষ্ঠ। এক সময় বর্ষা মৌসুম আসলেই চলনবিল পানিতে টুইটুম্বুর হয়ে থাকতো। জেলেরা মেতে থাকতো মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে মাছ ধরতে। মিলতো নানা প্রজাতির মাছ।
সেই মাছ স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে আবার দেশ-বিদেশে রপ্তানি হতো। হাঁসি খুশি ভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে সচ্ছলভাবে দিন কাটাইতো জেলেরা। কিন্তু প্রকৃতির এই হঠাৎ ঘনঘটায় নেই জেলেদের মুখে হাসি। পানি নেই,মাছ নেই। সংসার চলবে কি করে। দ্রুত চলনবিলে পানি না আসলে চলনবিলের জেলেদের দু:র্বিশ্বসহ জীবন যাপন করতে হবে।
চলনবিল অধ্যুষিত গুরুদাসপুর উপজেলার বিলশা অঞ্চলের জেলে আফজাল হোসেন বলেন, এক সময় আমাদের চলনবিলে পানি থৈই থৈই করতো। কিন্তু এখনও মাঝ বর্ষাতেও আমরা কোন বৃষ্টি ও পানি পাচ্ছি না। বর্ষার আগেই আমরা মাছ ধরার জন্য খেয়া জাল, জাকই জাল, ধুন্দি, চাই, দোয়ার, পলো, বর্ষিসহ সকল ধরনের যন্ত্র তৈরি করে রাখি।
কেননা বর্ষার আগমন হলেই শুরু হয় আমাদের মাছ ধরা। আর সেই মাছ ধরেই আমরা আমাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। বছরের অন্য মৌসুমে অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার চালাই। এবং বর্ষা মৌসুমে এসেই আমাদের শুরু হয় মাছ ধরা।
স্থানীয় বাজার সহ দেশ-বিদেশে রপ্তানি হয় আমাদের চলনবিলের মাছ। এখানে বিভিন্ন ধরনের মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু মাঝ বর্ষার সময় হলেও আমাদের চলনবিলে পানি আসে নি। তাই আমরা অনেক চিন্তিত। কারন মাছ বিক্রি করেই আমাদের ছেলে মেয়েদের পড়াশোনাসহ সংসারের যাবতীয় খরচ যোগাতে হয়। সময়মত পানি না আসায় আমরা অনেক হতাশাগ্রস্থ। যত দ্রুত চলনবিলে পানি আসবে, ততই আমাদের মঙ্গল। তাছাড়া না খেয়ে থাকতে হবে।
গুরুদাসপুর উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা আলমগীর কবীর জানান, দখল, দূষণ ও অপরিকল্পিতভাবে চলনবিলের খাল বিল ব্যবহার করায় আজ এই অবস্থা। তারপরও এবারের বর্ষাতেও কোন বৃষ্টি নেই বললেই চলে। মাঝ বর্ষার সময় হলেও এখন বর্ষার পানির কোন আনা গোনা নেই। তবে বর্ষা সময় মত না হলে চলনবিলের জেলেরা সংকটের মধ্যে পড়ে যাবে। আমাদের পক্ষ থেকে জেলেদের সকল ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করা হয়। তবে বর্ষার পানি আসলেই জেলেদের এই দুর্ভোগ থাকবে না।
