Home কৃষি ভেজাল বীজ কারখানায় ছয়লাভ সিংড়া!

ভেজাল বীজ কারখানায় ছয়লাভ সিংড়া!

475
0
ভেজাল বীজ কারখানা

বিশেষ প্রতিবেদক:
আসন্ন ইরি-বোরো মৌসুমকে সামনে রেখে কোন রকম মান নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই সিংড়ার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ভেজাল বীজ কারখানা। নানা ধরনের রং-চং প্যাকেটে ধান প্যাকেটজাত করে বীজ বলে বিক্রি করছে কিছু অসাধু বীজ উৎপাদকরা। আর এই ধরনের ভেজাল বীজ উৎপাদনের অন্তত ৮টি কারাখানা গড়ে উঠেছে সিংড়াতেই।

তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ প্রত্যায়ন অফিস নামে সরকারী দপ্তর থাকলেও তাদের কোন মনিটরিং নেই। বরং অনৈতিক অসুবিধা নিয়ে ভেজাল বীজ তৈরী করার সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে জেলা বীজ প্রত্যায়ণ অফিসার সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। দীর্ঘ দিন ধরে মানহীন বীজ উৎপাদন করলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বীজ উৎপাদকদের বিরুদ্ধে।

সূত্র জানায়, সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ প্রত্যায়ন এজেন্সির মাধ্যমে কৃষকদের মানঘোষিত টুথফুল লেভেল সিডস (টিএলএস) বীজ উৎপাদনের অনুমোদন বা লাইসেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যক্তিরা এই সুযোগ নিয়ে মানহীন বীজ উৎপাদনে নামে। আর প্রতিবছর ইরি-বোরো মৌসুম আসার আগে ওইসব বীজ উৎপাদকদের তৎপরতা বৃদ্ধি পায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে খাদ্য ভান্ডারখ্যাত চলনবিলের সিংড়ায় মানহীন বীজ উৎপাদন করছে অন্তত আটটি প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে তারা বীজ উৎপাদন করছে। মানহীন বীজ উৎপাদন করছে সে সব কোম্পানী হচ্ছে, মেসার্স কৃষক ভাই বীজ ভান্ডার, গাজীপুর সীড লিমিটেড, স্কয়ার সীড কোম্পানী, গ্রীন সুপার সীডস, লর্ডস ইন্টারন্যাশনাল সীডস, সরকার সীডস লিমিটেড, গোল্ডেন সীড, শেখ সীড। আর এসব প্রতিষ্ঠান বিআর-২৮, বিআর-২৯, বিআর-৫০ ধান সহ রোপা আমন জাতের বীজ উৎপাদন করে থাকে।

অভিযোগ রয়েছে, খোলা বাজার থেকে ধান ক্রয় করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বীজের গুনগত মান যাচাই-বাছাই না করেই প্যাকেটজাত করে তারা। স্থানীয় বাজারে এসব বীজ বিক্রি না করে তারা দূরের অন্তত ২০টি জেলায় এসব বীজ সরবরাহ করছে। এতে করে প্রতারণার শিকার হচ্ছে কৃষকরা। আর রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছে ভেজাল বীজ উৎপাদকরা।

সরেজমিনে সিংড়ার পৌর শহরের বালুয়া বাসুয়া চলনবিল গেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাহিরে কৃষক ভাই বীজ ভান্ডারের সাইন বোর্ড থাকলেও ভিতরে বিশ্বাস সিডস নামে বিআর-২৮ধান প্যাকেটজাত করা হচ্ছে। কোন রকম গ্রেডিং, আদ্রতা বা বীজ গোজানোর ক্ষমতা মাপ যন্ত্রপাতি নেই তাদেও কাছে।

ছোট একটি কুঁড়ে ঘরে টেবিল ফ্যান দিয়ে ধান উড়িয়ে প্যাকেটজাত করা হচ্ছে। তাছাড়া সরকার অনুমোদিত একই নম্বরের একাধিক ট্যাককার্ড লাগানো প্যাকেটও চোখে পড়ে।

এসময় মেসার্স কৃষক ভাই বীজ ভান্ডারের স্বত্বাধিকার মো. আতিকুর রহমান জানান, নিজস্ব কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করে এসব বীজ প্যাকেটিং করছেন। আর এর জন্য কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা কারো অনুমতির প্রয়োজ নেই। তবে তার বীজের ব্যাপক সুনাম রয়েছে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যাক্তি অভিযোগ করে বলেন, মেসার্স কৃষক ভাই বীজ ভান্ডার খোলা বাজার থেকে ধান ক্রয় করে ট্রাক যোগে রাতের আধাঁরে এনে প্যাকেটজাত করে উত্তারাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে থাকে।

সিংড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও নাটোর জেলা কৃষক সমিতির সভাপতি মো. মিজানুর রহমান মিজান বলেন, চলনবিলে কৃষকের গলায় থেকে ধান কিনে যত্রতত্র ভাবে বীজ প্যাকেটিং করা হচ্ছে। এতে প্রতি বছরই ভেজাল বীজ কিনে অনেক কৃষকই প্রতারিত হচ্ছে। আর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও মনিটরিংয়ের অভাবে দিন দিন হাট-বাজারগুলো ভেজাল বীজে ছেয়ে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তদারকির করার এখতিয়ার আমাদের নেই। আর অত্র উপজেলায় বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা তিনার জানা নেই। কারণ যারা বীজ উৎপাদন করছে তারা কৃষি অফিসের সাথে সংশ্লিষ্ট না। এদের দেখভালের জন্য বীজ প্রত্যায়ন অফিস রয়েছে। তারাই এদের মনিটরিং করবে।

জেলা বীজ প্রত্যায়ণ অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, মানঘোষিত বীজ উৎপাদনে উৎপাদকের সকল দায় দায়িত্ব তার ওপর বর্তায়। এখানে বীজ প্রত্যায়ন অফিসের কোন মনিটরিং নেই। তবে আমরা বাজার মনিটরিং করি। তাছাড়া আমার জনবল সংকট রয়েছে। তারপরও কৃষক ভাই বীজ ভান্ডারের বীজ না দেখে তাদেও বীজ উৎপাদন না করার জন্য বলা হয়েছে। তবে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগের আঙ্গুল তোলার সুযোগ নেই।

Previous articleযমুনাতে ঘড়িয়াল আটক, উদ্ধার ও অবমুক্ত
Next articleনাটোরে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক নিহত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here