
মাহবুব হোসেন:
থানার অপরাধী বোর্ডে ঝুলছে ছবি, নানা অপরাধি ব্যক্তিদের সাথে সেখানেও ঝুলানো রয়েছে জিয়াউর রহমান ওরফে জিয়ার ছবি। সেই ছবির ওপর লেখা মাদক ব্যবসায়ী জিয়া। আর এই মাদক ব্যবসায়ীই হয়েছেন নাটোরের লালপুর উপজেলার নূরুল্লাহপুর দাখিল মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি।
বর্তমানে দুটি মাদক মামলা সহ অন্তত ৬টি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তারপরও শিক্ষানুরাগি হিসেবে দীর্ঘ ১০বছর ধরে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। রয়েছেন লালপুর উপজেলার ঈশ্বরদী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক।
তবে এডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও আবারও তাকে মাদরাসার সুপার শিক্ষানুরাগি বানিয়ে সভাপতি করার জন্য বাংলাদেশ মাদরাসা বোর্ড বরাবর সুপারিশ পাঠিয়েছেন। একজন মাদক ব্যবসায়ী মাদাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি হয়ে কতটা শিক্ষার মানন্নোয়নে কাজ করবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সূত্র জানায়, ১৯৯৬সালে স্থানীয় নাসির উদ্দিন নামে এক শিক্ষানুরাগি নূরুল্লাহপুর দাখিল মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। মাদরাসা পরিচালনা করার জন্য বিগত দিনে ৬জন ব্যক্তি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সপ্তম নম্বরে এসে জিয়াউর রহমান ওরফে জিয়া ২০১১ সালের ২৯নভেম্বর মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি নিযুক্ত হন। জিয়ার সভাপতির প্রথম দফার মেয়াদ শেষ হয় ২০১৩সালের ২০ সেপ্টেম্বর।
এরপর ২০১৩সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করেন তিনি।
একজন মাদক ব্যবসায়ী কখনও মাদ্রসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি হতে পারেনা। -জেলা শিক্ষা অফিসার রমজান আলী আকন্দ
কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার একবছর আগেই চিহ্নিত এই মাদক ব্যবসায়ীকে শিক্ষানুরাগি বানিয়ে মাদরাসার সুপার রফিকুল ইসলাম ২০২০সালের ১৪ডিসেম্বর মাদরাসা পরিচালনার জন্য স্থানীয় তিনজন শিক্ষানুরাগীর নাম প্রস্তাব করে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের রেজিষ্টার বরাবর প্রেরণ করেন।
ওই চিঠিতে শিক্ষানুরাগী হিসেবে প্রথমে নাম দেওয়া হয়েছে সাজ্জাদ হোসেন সুমনের নাম। সেখানে শিক্ষাগত যোগ্যতা দেওয়া হয়েছে বিএসএস (অর্নাস) এমএসএস। দ্বিতীয় নম্বরে দেওয়া হয়েছে জিয়াউর রহমান ওরফে জিয়ার নাম। সেখানে জিয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণী পাশ। আর বলা হয়েছে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা এবং নির্মাণ কাজে অনুদান দিয়ে আসছে সে। এছাড়া তৃতীয় নম্বরে হাফিজুর রহমানের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। তারও শিক্ষাগত যোগ্যতা অস্টম শ্রেণী পাশ।
মাদ্রাসার সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, বিগত দিনের সংসদ সদস্যদের সুপারিশে তাকে সভাপতি করা হয়েছে। সেখানে আমাদের কিছু করার নেই। একজন মাদক মামলার আসামী কি ভাবে সভাপতি হয়, এমন প্রশ্নে মাদসারা সুপার বলেন, কেউ কি চায় তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদক মামলার আসামী সভাপতি হোক। তারপরও তো আপনার স্বাক্ষরে সুপারিশ পাঠিয়েছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যরা যাকে সিলেকশন দেন তাকে আমাদের সভাপতি করতে হয়।
জেলা শিক্ষা অফিসার রমজান আলী আকন্দ বলেন, একজন মাদক ব্যবসায়ী কখনও মাদ্রসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি হতে পারেনা। বিষয়টি সর্ম্পকে অবগত হয়েছি। একজন মাদক ব্যবসায়ী যাতে সভাপতি হতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জিয়াউর রহমান ওরফে জিয়ার নামে লালপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে এফআই আর নং ১০-১২সেপ্টম্বর ২০১৭, জিআর নং ২৩২, এফআইআর নং ৪, তারিখ ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৪, এফআইআর নং ২৪, তারিখ ২২আগস্ট ২০১৪, এফআইআর নং ২৪, তারিখ ২২অক্টোবর ২০১১, এফআইআর নং ৪, তারিখ ১১জানুয়ারী ২০০৭ এবং পাবনার ঈশ্বরদী থানার এফআইআর নং ১৮,তাং ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১০।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফজলুর রহমান বলেন, জিয়াউর রহমান ওরফে জিয়ার নামে থানায় মোট ৬টি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে মাদক সংক্রান্ত দুটি এবং মারামারির ৪টি মামলা। এরমধ্যে ঈশ্বরদী থানায় একটি মামলা রয়েছে। সবগুলো মামলাই তার নামে অভিযোগপত্র রয়েছে। বর্তমানে মামলাগুলো আদালতে বিচারাধিন রয়েছে।
ওসি আরও বলেন, বর্তমানে জিয়াউর রহমান এখনও মাদকের সাথে জড়িত রয়েছে বলে আমাদের কাছে খবর রয়েছে। তবে সঠিক তথ্য প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এব্যাপারে নূরুল্লাহপুর দাখিল মাদরাসার সভাপতি জিয়াউর রহমান ওরফে জিয়া বলেন, তার নামে মাদক সহ যে ৬টি মামলা রয়েছে, তার মধ্যে ৪টি মামলায় আদালত তাকে নির্দেশ হিসেবে খালাস দিয়েছে। আগে তিনি মাদকের সাথে জড়িত থাকলেও বিগত দশ বছরে তার নামে কোন মামলা হয়নি বলে দাবী করেন। তাছাড়া রাজনৈতিক ভাবে তাকে কিছু মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবী করেন তিনি। তবে বর্তমানে তিনি কোন মাদকের সাথে জড়িত নয়, বলে দাবী তার।
