Home সজাগ অনুসন্ধান রাতের আঁধারে ২০স্পটে তৈরী হচ্ছে ভেজাল গুড়!

রাতের আঁধারে ২০স্পটে তৈরী হচ্ছে ভেজাল গুড়!

654
0
ভেজাল গুড় পর্ব-০১

নিজস্ব প্রতিবেদক:
খেজুর রসের মৌসুম শেষ হয়েছে বেশ কয়েক মাস আগেই। কিন্তু এখনও তৈরী হচ্ছে গুড়। যা চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে সে গুড়ে খেজুর বা আখের রসের প্রয়োজন হয় না। কৃত্রিম রস, আর অস্বাস্থ্যকর সব কেমিকেল মিশিয়ে রাতের আঁধারে লালপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে চলছে রমরমা ভেজাল গুড় তৈরী। মাঝে মাঝে ভেজাল গুড় বিরোধি অভিযান চাললেও কোন ভাবেই থামেছেনা গুড় তৈরী। এতে করে হুমকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য।

অনুসন্ধানে জানা যায়,লালপুর উপজেলার বালিতিতা ইসলামপুর, লালপুর সদর ও ওয়ালিয়াতে গড়ে উঠেছে অন্তত ২০টির বেশি ভেজাল গুড় তৈরীর কারখানা। রাতের আঁধারে এসব কারখানায় তৈরী হয় কেমিকেল মিশ্রিত গুড়। রাতের তৈরী গুড় সকালেই চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,ওয়ালিয়া পশ্চিমপাড়া এলাকার দিনার হোসেনের ছেলে সাদ্দাম হোসেন,একই এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে আলম হোসেন,ওয়ালিয়া সিপাইপাড়া এলাকার কুমর আলীর ছেলে সুজন, একই এলাকার নিজাম হোসেনের ছেলে বিদ্যুৎ হোসেন,তেতু আলীর ছেলে নাইম আলী,ওয়ালিয়া বিন্দপাড়া এলাকার মোতালেব আলীর ছেলে সাগর, নতুন পাড়া এলাকার চান্দুর ছেলে মুনির একই এলাকার বক্কার ছেলে রাজু।
ভেজাল গুড় তৈরীর সাথে জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক এক ব্যক্তি বলেন,আড়তদাররা অধিক মুনাফা লাভের জন্য নিজের মতো করে গড়ে তুলেছেন ভেজাল গুড় তৈরীর কারখানা। ওই সকল কারখানাতে খেজুর বা আখের রসের প্রয়োজন হয় না, শুধু কাপড়ের রং, চিনি, চিটা গুড় ও হাইড্রোজসহ রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরী করা হচ্ছে খেজুর বা আখের গুড়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক গাছি বলেন, ‘শীত মৌসুমে অসাধু ব্যবসায়ীরা নানা উসিলায় আমাদের তৈরী খেজুরের গুড় কম দাম কিনে রাখে। আর নিজেদের কারখানায় তৈরী ভেজাল গুড় আসল গুড় বলে চালিয়ে দেয়। এই সকল আড়ৎদাররা ভেজাল গুড়ের ব্যবসা করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে।

গুড় পরিবহন
রাতে ভেজাল গুড় তৈরীর পর এভাবেই সকালে আড়তে আসার পর নিয়ে যাওয়া হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষনের লালপুর উপজেলা কমিটির নির্বাহী সদস্য আবু রায়হান বলেন,লালপুর উপজেলার বালিতিতা ইসলাম, ওয়ালিয়া, চকনাজিরপুর, আড়বাব ইউনিয়নের হাশেমপুর, কুচয়া, ঈশ্বরদী ইউনিয়নের চামটিয়া, দুড়দুরিয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর, নওপাড়া, আব্দুলপুর সহ বেশ কিছু এলাকায় এসব ভেজালগুড়ের কারখানা তৈরী হয়েছে।

তিনি বলেন, সপ্তাহে দুই দিন রাতে তারা ভেজাল গুড় তৈরী করে। বিভিন্ন সময় র্যা বের অভিযানে কারখানা মালিকের বিভিন্ন মেয়াদের সাজা ও অর্থদন্ড করলেও ধরা ছোঁয়ার বাহিরেই থাকছে রাঘব বোয়ালরা। যে সকল আড়ৎদাররা ভেজাল গুড় তৈরীর কারবার করছে তাদের আইনের আওতায় না আনা গেলে বন্ধ হবেনা এই ভেজাল গুড় তৈরী। অনেক সময় ভ্রাম্যমান আদালত জরিমানা করলেও আবার তারা একই কাজ করে। তাই আইনের কঠোর প্রয়োগ না হলে, ভেজাল গুড় তৈরী বন্ধ হবে না।

এব্যাপারে ওয়ালিয়া গুড় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুস সামাদ ভেজাল গুড় তৈরীর করা কথা অস্বীকার করে বলেন, কোথায় ভেজাল গুড় তৈরী এটা তার জানা নেই।

নাটোর পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, ভেজাল গুড় উৎপাদন করার কোন সুযোগ নেই। বিষয়টি আমার জানার বাহিরে ছিল। জানার পর থেকে এর সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে।

নাটোরের জেলা প্রশাসক মো: শাহরিয়াজ বলেন, মাঝে মধ্যেই ইউএনও ভেজাল গুড়ের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে। কিন্তু দুষ্টু চক্রের লোকজন মানুষের স্বাস্থ্যহানী করে এই অসাধু ব্যবসা করে যাচ্ছে। এসব ভেজাল গুড়ের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অভিযান পরিচালনা করা হবে।

Previous articleকরোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু: কেউ না আসায় সৎকার করলেন ইউএনও
Next articleপানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here