Home সজাগ অনুসন্ধান নাটোর সরকারী বালিকা বিদ্যালয়: রাতে ছাত্রীদের ম্যাসেঞ্জারে কু-প্রস্তাব দিতেন শিক্ষক সাইফুল

নাটোর সরকারী বালিকা বিদ্যালয়: রাতে ছাত্রীদের ম্যাসেঞ্জারে কু-প্রস্তাব দিতেন শিক্ষক সাইফুল

1117
0

নিজস্ব প্রতিবেদক
নাটোর সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক আব্দুল হাকিমের যৌন নিপীড়নের পর একের পর এক ঘটনা বেরিয়ে আসছে। শিক্ষক আব্দুল হাকিমের মতো ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করতেন আরেক শিক্ষক সাইফুল ইসলাম। তিনি রাতে ছাত্রীদের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। ছাত্রীদের দেওয়া বেশ কিছু কুপ্রস্তাবের স্ক্রীন সট এসেছে সজাগ নিউজের কাছে।

এদিকে, বছরখানেক আগে সাবেক এক ছাত্রীর সাথে ঘটে যাওয়া বর্তমানে কর্মরত গণিত বিভাগের শিক্ষক সাইফুল ইসলামের যৌন নিপীড়ন ফেসবুকে উঠে এলে বেরিয়ে আসে ওই শিক্ষকের কুকীর্তি। তবে কেউ যৌন নির্যাতনের অভিযোগ না করায় আগামী সাত দিনের মধ্যে তাকে অন্যত্র বদলি হওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে দিনের পর দিন সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ে এমন ঘটনায় হতবাগ করেছে অভিভাবক ও নাটোরবাসীকে। সে সাথে চিন্তিত হয়েছেন অভিভাবকরা।

গত ২৬শে আগস্ট তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর অভিভাবকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রেফতার হন স্কুলের শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক আব্দুল হাকিম। এ নিয়ে সজাগ নিউজ সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

সাবেক ছাত্রীর সেই ফেসবুক পোস্ট।

এরপর শহরের লালবাজার এলাকায় বসবাসকারী স্কুলের সাবেক এক ছাত্রী তার এক সহপাঠীকে শিক্ষক সাইফুল কর্তৃক নিপীড়নের ঘটনা প্রকাশ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সাইফুল ওই ছাত্রীকে ফেসবুকের মন্তব্য প্রত্যাহারে হুমকি দেন। রাজী না হলে মন্তব্যকারী ওই তরুণীর বাড়িতে চলে এসে তাকে হুমকি দেন। তরুণী ভীত হয়ে মন্তব্যটি প্রত্যাহার করেন পুরো বিষয়টি তার এক ভাইকে জানান।
সেলফোনে ওই ভাই সাইফুলের সাথে কথা বলে উল্টো তরুণীকে দেখে নেবার কথা বলে তার বাড়িতে আসেন। ততক্ষণে মন্তব্য প্রত্যাহারের বিষয়টি না জেনে তরুণীর বাড়িতে সাইফুল জানতে পারেন তরুণীর ভাই শহরের প্রভাবশালী ব্যক্তি। এতে ভীত হয়ে ক্ষমা চান শিক্ষক সাইফুল। স্থানীয়রা বিষয়টি জানার পর ওই রাতেই লালবাজার এলাকায় সাইফুলকে গণপিটুনি দেন।

পরদিন সাইফুলের সাথে তরুণীর সহপাঠীর ফেসবুক কথোপকথন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ওইদিন রাতে কথোপকথনের চৌকস অংশ গণমাধ্যম কর্মীদের হাতে আসে

কথোপকথনে শিক্ষক সাইফুল ওই ছাত্রীকে সরাসরি যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। এর জন্য তার স্ত্রীকে সে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়ারও কথা বলে। সাইফুল জানায়, ছাত্রীটিকে পাবার জন্য তার চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এজন্য ছাত্রীর শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গের ছবিও চান তিনি।

ঘটনার পরের দিন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকরামুল ইসলামের নেতৃত্বে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির সভা।
গত ২৬শে আগস্ট রাতে লালবাজারের ঘটনায় ২৮শে আগস্ট সকালে বিদ্যালয়ে সাইফুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে আসেন ফেসবুকে মন্তব্যকারী সেই তরুণীর পরিবার। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন সাইফুলকে অভিযোগের ব্যাপারে জেরা করলে প্রথমে অস্বীকার করেন সাইফুল। পরে কথোপকথনের স্ক্রীনশর্ট দেখালে হাত-পা ধরে ক্ষমা চান তিনি।

এ ঘটনা জানার পর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির সভায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাইফুলকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডাকা হয়। এসময় সাইফুলের সামনে সকল তথ্য প্রমান উপস্থাপন করা হয়। সাইফুল সবার সামনে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

এসময় পুলিশের পক্ষ থেকে সাইফুল ইসলামকে আগামী সাত দিনের মধ্যে অন্যত্র বদলি হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যত্রায় তাকে গ্রেফতার করার হুমকি দেন পুলিশ প্রশাসন।

বৈঠকে মূখ্য ভূমিকা পালনকারী নাটোর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকরামুল ইসলাম বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পাওয়ায়’ সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সতর্ক করা হয়েছে। তবে বিদ্যালয়ের শৃংঙ্খলা ফেরাতে পুলিশ এবং বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন শুরুতে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে আসেন। পরে সকল তথ্য প্রমান বেরিয়ে আসলে তিনি জানান, শিক্ষক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে।
এসব ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক সাইফুলের বক্তব্য নিতে একাধিকবার সেলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

Previous articleলালপুরে পাওয়ার ক্রাসারে আখ মাড়াই বন্ধে মতবিনিময় সভা
Next articleচাঁদা না পেয়ে হাইওয়ে পুলিশের ডিম নষ্ট: ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ও অভিযুক্তদের শাস্তিতে রুল জারি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here