Home সজাগ অনুসন্ধান সঞ্চয়পত্রের বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে

সঞ্চয়পত্রের বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে

370
0

সরকারের নানা পদক্ষেপে নতুন অর্থবছরের (২০১৯-২০) প্রথম মাসেই কমে এসেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। আগের বছরের জুলাই মাসের চেয়ে এই বছর সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ অর্ধেকে নেমে এসেছে। জুলাই মাসে ২ হাজার ১৬০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। আগের বছরের (২০১৮) জুলাই মাসে ৫ হাজার ৩৬ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল, যা ২০১৯ সালের জুলাইয়ের চেয়ে ২ হাজর ৮৭৬ কোটি টাকা বেশি। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমে যাওয়ার জন্য উৎসে কর বেড়ে যাওয়া ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপকে দায়ী করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে গিয়ে নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া উৎসে করও বাড়ানো হয়েছে। আবার ব্যাংক আমানতে সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই ব্যাংকের দিকে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। ফলে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমে গেছে। অন্যদিকে ব্যাংকে আমানত বেড়ে যাচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, ব্যাংক মালিকদের অনুরোধে সরকার সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমাতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেয়। এই অর্থবছরে পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া, এক লাখ টাকার বেশি মূল্যমানের সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একই ব্যক্তির একাধিক জায়গা থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা ঠেকাতেও নেওয়া হয় পদক্ষেপ।

সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে ব্যাংক খাতে বেড়ে গেছে আমানতের পরিমাণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন মাসেই (এপ্রিল-জুন) ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে ৬০ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, বাজেট ঘাটতি পূরণে প্রতিবছরই দুইভাবে ঋণ নিয়ে থাকে সরকার। এর একটি হচ্ছে বৈদেশিক সহায়তা, অন্যটি অভ্যন্তরীণ উৎস। অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবে ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নেওয়া হয়। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ধার করার লক্ষ্য রয়েছে। এরমধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল সরকার। কিন্তু সরকার এই খাত থেকে ঋণ নিয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। বিদায়ী অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিয়েছে ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। যা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা বেশি। বিক্রি বাড়তে থাকায় সংশোধিত বাজেটে এটির লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা ঠিক করা হয়।

যদিও বিক্রির লাগাম টেনে ধরতে ২০১৫ সালের ১০ মে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার গড়ে ২ শতাংশ কমানো হয়েছিল। এর আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ছিল ১৩ শতাংশেরও বেশি।

বর্তমানে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের চালু করা চার ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। এগুলো হলো—পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্র, পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্র, পাঁচ বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র এবং তিন বছর মেয়াদি ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র। এগুলোর গড় সুদের হার ১১ শতাংশের বেশি।

বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

জানা গেছে, বিগত কয়েক মাস ধরে কোনও কোনও ব্যাংক ১৪ শতাংশের বেশি সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহ করছে। অধিকাংশ ব্যাংক আমানত বাড়াতে অনেক কর্মকর্তাকে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছে। কোনও কোনও ব্যাংক ৫ বছরে টাকা দ্বিগুণ করার আশ্বাসে আমানত সংগ্রহ করছে।

Previous articleফেসবুক থেকে উঠে যাচ্ছে লাইক অপশন
Next articleলালপুরে গ্রামীন সড়কের দুই ধারে বৃক্ষরোপন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here