
করোনা সংক্রমণের কারণে দীর্ঘ বিরতির পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছে বাংলাদেশ দল। এই ম্যাচ দিয়েই নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরেছেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে জয়ের নায়কও তিনি। ঘরের মাঠে শততম ম্যাচে বল হাতে ৪ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতে ১৯ রান করে ফেরেন তিনি। এদিকে পূর্ণ মেয়াদে অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া তামিম নেতৃত্বের নতুন অধ্যায় শুরু করলেন জয় দিয়ে।
দীর্ঘদিন পর মাঠে ফিরে স্বস্তি নেই টাইগারদের। বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব হিসেবে বিবেচিত সুপার লিগের খেলায় ভুল করার সুযোগ নেই। সবে মিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে বেশ সতর্ক ছিল অধিনায়ক তামিম ইকবালের দল। তার ফলটাও হাতেনাতে পেয়েছে। বুধবার ক্যারিবীয়দের ৬ উইকেটে হারিয়ে ‘১০ পয়েন্ট’ নিজেদের পকেটে নিয়েছে বাংলাদেশের দল।
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, দ্বিপাক্ষিক সিরিজে আবার পয়েন্টের হিসাব আসছে কেন? আধুনিক ক্রিকেটে এখানেও এক সমীকরণ দাঁড় করিয়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ হবে ভারতে। সেখানে অংশগ্রহণ করতে হলে বাছাইপর্ব টপকাতে হবে খেলুড়ে দেশগুলোকে। এজন্য সুপার লিগের বন্দবস্ত করেছে আইসিসি।
এই সুপার লিগের নিয়ম অনুযায়ী সাকুল্য ২১০ পয়েন্টের জন্য লড়বে অংশগ্রহণকারী দলগুলো। যেখানে প্রতি ম্যাচ জয়ের জন্য থাকছে ১০ পয়েন্ট। বিশ্বকাপ খেলতে গেলে প্রায় ১৭০ পয়েন্ট অর্জন করতে হবে সকলকে। সেই লক্ষ্যে মাঠে নেমেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ ও সফরকারী উইন্ডিজ দল। বুধবার দুই দলেরই ছিল সুপার লিগের প্রথম ম্যাচ। যেখানে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে জিতে ১০ পয়েন্ট বাংলাদেশের।
এদিন মিরপুরে আগে বল করে ক্যারিবীয়দের মাত্র ১২২ রানে আটকে দেয় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। পরে ১২৩ রানের সহজ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে ঠাণ্ডা মাথার খেলতে থাকেন স্বাগতিক দলের ব্যাটসম্যানরা। লক্ষ্য পূরণে কোনো তাড়াহুড়ো ছিল না তামিম ইকবাল, লিটন দাসদের। উদ্বোধনি জুটিতে ৮২ বলে ৪৭ রানের পার্টনারশিপ গড়েন দুজন। পরে অবশ্য ১৮ রানে থাকা লিটন সাজঘরের পথ ধরেন। ৩৮ রানের ইনিংসটি ২টি চারের মার ছিল লিটনের ব্যাটে।
যাকে নিয়ে এতো আলোচনা। তিন নম্বর পজিশনে বাংলাদেশ দলের সফল ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসানকে চারে নামিয়ে যাকে তিনে নম্বরে খেলানো হয়, এই ম্যাচে সেই নাজমুল হোসেন শান্ত রাখতে পারেননি টিম ম্যানেজমেন্টের মান। মনোযোগ হারিয়ে আকিল হোসেনের বলে জেসন মোহাম্মদের হাতে ক্যাচ দিয়ে মাত্র ১ রানে ফেরেন তিনি। এরপর ব্যাটিংয়ে আসেন সাকিব, জুটি গড়েন তামিমের সঙ্গে। তবে এরপর তামিম নিজে বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি। ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৪ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন তিনি।
সাকিব-মুশফিক জুটিটাও জমেনি না এদিন। ইনিংস বড় করার আভাস দিয়েও মাত্র ১৯ রানে থামে সাকিবের সংগ্রহ। তাকে সাজঘরের পথ দেখান ক্যারিবীয়দের হয়ে অভিষেক ক্যাপ পাওয়া আকিল। পরে মুশফিকুর রহিমের অপরাজিত ১৯ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ৯ রানের সুবাদে ৯৭ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে সুবিধা করতে পারেনি উইন্ডিজ। প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে বল হাতে জ্বলে ওঠেন সাকিব। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন অভিষিক্ত হাসান মাহমুদ ও মুস্তাফিজুর রহমান। মাত্র ৮ রান খরচ করে ক্যারিবীয়দের ৪ উইকেট তুলে নেন সাকিব। হাসানের ৩ উইকেটের সঙ্গে মুস্তাফিজের ২টি।
মিরপুরের শেরেবাংলায় ম্যাচের শুরুতেই উইন্ডিজ হারিয়ে বসে ওপেনার সুনীল অ্যামব্রিসকে। ৭ রানে থাকা অ্যামব্রিসকে ফেরান মুস্তাফিজ। এরপর একে একে যাওয়া আসার মিছিলে যোগ দেন সফরকারী ব্যাটসম্যানরা। মাঝে কাইল মায়ার্স ও রভম্যান পাওয়েল প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি তাতে। সাকিব আর হাসান মাহমুদের বোলিং তোপে সুবিধা করতে পারেননি তারা। পাওয়েল ২৮ ও মায়ার্স ৪০ রানে আউট হলে মাত্র ১২২ রানে গুটিয়ে যায় উইন্ডিজ। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ আগামী শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায়।
