
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিতর্ক কেন পিছু ছাড়ছে না সদ্য অনুষ্ঠিত হওয়া সিংড়ার ১২টি ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে। একের পর এক বিতর্ক বের হচ্ছে। ভোট গ্রহনের আগে থেকেই নির্বাচনে কারসাজি এবং প্রিজাইডিং অফিসারদের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠে। তবে এবার সেই বিতর্ক আরও ছড়িয়ে পড়েছে ভোট গ্রহনের ১০ দিন পর সিলমারা ব্যালট পেপার উদ্ধার নিয়ে।
যদিও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ইসি থেকে সরবরাহকৃত আর উদ্ধার হওয়া ব্যালটের মধ্যে কোন মিল নেই।
সিংড়ায় ভোট কারচুপির প্রতিবাদে মানববন্ধন
সূত্রগুলো বলছে, গত ২৬ ডিসেম্বর সিংড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের আগেই প্রিজাইডিং অফিসারদের বিরুদ্ধে কারচুপির সম্ভাবনার অভিযোগ তুলেন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। কোন কোন প্রার্থী প্রিজাইডিং অফিসার পরিবর্তনের জন্য রিটানিং অফিসার বরাবর আবেদনও করেন। ভোট গ্রহনের আগে গত ১৮ডিসেম্বর সিংড়া উপজেলার ১০নম্বর চৌগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহনে দায়িত্বে থাকা চারজন প্রিজাইডিং অফিসারের বিরুদ্ধে নির্বাচন কারচুপির সম্ভাবনার অভিযোগ আনেন বিদ্রোহী প্রার্থী আলতাফ হোসেন। এজন্য তিনি প্রিজাইডিং অফিসার পরবর্তনের জন্য জেলা প্রশাসক, রিটার্নি অফিসার, জেলা নির্বাচন অফিসার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ বিভিন্ন দপ্তর প্রধান বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। পরবর্তীতে দু’জন প্রিজাইডিং অফিসারকে পরিবর্তন করা হয়।
সিংড়ায় নৌকা প্রার্থীর ফলাফল পাল্টানোর অভিযোগ ! পুণঃগণনার দাবী
এছাড়া ভোট গ্রহনের পরদিনই। সিংড়া উপজেলার কলম ইউনিয়নে ফলাফল পাল্টিয়ে নৌকা প্রার্থীকে হারানোর অভিযোগ করেন নৌকা প্রতিকের প্রার্থী নাসির উদ্দিন। এক সংবোদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, স্বতন্ত্র এক প্রার্থীকে বিজয়ী করতে যোগসাজশের অভিযোগ করেছেন দায়িত্বরত প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। বিষয়টি সুরাহা করতে প্রজ্ঞাপন স্থগিত করে ওই ইউনিয়নের ব্যালট পূণঃগণনার দাবী করেন তিনি।
অভিযোগে নাসির উদ্দিন দাবী করেন, ভোট গণনা শেষে ১০টি কেন্দ্রের ফলাফলে তিনি ৯৪ ভোটে বিজয়ী ছিলেন। কিন্তু এরপর উপজেলা কন্ট্রোলরুম থেকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ঘোড়া প্রতীক প্রার্থী মইনুল হক চুনুকে ৭ ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
সিংড়ায় বস্তাবন্দি সীলমারা ব্যালট পেপার উদ্ধার
ভোট গণনার আগে কয়েকটি কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেয়ার দাবি করে তিনি বলেন,দায়িত্বরত প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা যোগসাজসে চুনুকে বিজয়ী ঘোষণা করতে তার ফলাফল পাল্টে দেওয়া হয়।
গত ৩০ডিসেম্বর সিংড়া উপজেলার ৬নং হাতিয়ান্দহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৬নং ওয়ার্ডের নলবাতা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সদস্য প্রার্থীদের ভোট গণনায় কারচুপির প্রতিবাদ ও পুনরায় ভোট গণনার দাবিতে মানববন্ধন করে ওয়ার্ডবাসী । ৬নং ওয়ার্ডবাসীর আয়োজনে পাঁচ লাড়ুয়া বাজারে এই মানবন্ধন করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নলবাতা কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারের যোগসাজশে প্রতিপক্ষ দেলোয়ার হোসেনের কর্মী-সমর্থকরা ভোট গণনার কিছুক্ষণ আগে ভয়ভীতি দেখিয়ে এজেন্টদের স্বাক্ষর নিয়ে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেন এবং কেন্দ্রের বাহিরে অতর্কিতভাবে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকদের উপর হামলা করেন। এমন বিশৃঙ্খলার সুযোগে ভোট কারচুপি করে দেলোয়ারের বৈদ্যুতিক পাখাকে বিজয়ী ঘোষনা করেন প্রিজাইডিং অফিসার। বক্তারা ভোট কারচুপির তীব্র প্রতিবাদ ও পুনরায় ভোটের ব্যালট গণনার দাবি জানান।
সিংড়ায় নৌকার প্রার্থীর ১০হাজার টাকা জরিমানা
সবশেষ গত ০৪(জানুয়ারি) সকাল ৯টায় উপজেলার চামারী ইউনিয়নে বিলদহর মরা নদীতে বস্তাবন্দি সিলমারা ব্যালট পেপার উদ্ধার করে স্থানীয়রা। পরে পুলিশ গিয়ে তা উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। অধিকাংশ ব্যালট পেপারে মোটরসাইকেল এবং নৌকায় সিল মারা ছিল।
ব্যালট চুরির অভিযোগ এনে ৫জানুয়ারী মানববন্ধন করেছে পরাজিত দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী ও পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ। চামারী ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
বক্তারা বলেন, একটি কুচক্রি মহল ব্যালট চুরির মাধ্যমে ষড়যন্ত্র করে এই নির্বাচনে ভোটের ফলাফল পাল্টে দেয়া হয়েছে। দ্রুতই এবিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল আলম বলেন, উদ্ধারকৃত ব্যালট পেপারগুলো সাথে আমাদের সরবরাহকৃত ব্যালট পেপার ও স্বাক্ষর, সীলের কোন মিল নেই। কারা অপপ্রচার ছড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
