Home সজাগ অনুসন্ধান সিংড়ায় কামাল মেম্বার’র তাণ্ডবে এক বছরেও বাড়ি ফিরেনি ৫ পরিবার

সিংড়ায় কামাল মেম্বার’র তাণ্ডবে এক বছরেও বাড়ি ফিরেনি ৫ পরিবার

1491
0

বিশেষ প্রতিবেদক
নাটোরের সিংড়ায় একটি হত্যা মামলাকে কেন্দ্র করে বিগত এক বছরেও নিজ বাড়িতে ফিরতে পারেনি ৫টি পরিবার। প্রতিপক্ষের লুট-পাটের বাড়ি গুলো ভুতরে বাড়িতে পরিনত হয়েছে। তান্ডবে প্রতিটি চিহ্ন বাড়িগুলো বয়ে বেড়াচ্ছে। অসহায় পরিবারগুলো আত্মীয় বাড়িতে আশ্রয় নিলেও গ্রাম্য শালিসে দুই’শ বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে দেয়নি প্রতিপক্ষরা। এতে করে মানবেতর জীবন-যাপন করছে পরিবারগুলো।

তবে অভিযোগ রয়েছে, ডাহিয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের ইউপি সদস্য কামাল হোসেন এলাকায় ত্রাসের রাজক্ত কায়েম করেছে। তার ভয়ে গ্রামের কেউ কথা বলার সাহস পাচ্ছে না।

সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে সিংড়ার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের ইউপি মেম্বার কামাল হোসেনের সাথে মৃত তমিজ উদ্দিনের ৬ ছেলের জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো। এরই জের ধরে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারী দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ১৫জন আহত হয়। এতে ইউপি মেম্বার কামাল হোসেনের বড় ভাই আলমগীর হোসেন নিহত হন।

এরপর মৃত তমিজ উদ্দিন ও কৃষক রইচ উদ্দিনের ৫ ছেলের বাড়ি ঘরে লুটপাট করে তাদের গ্রাম ছাড়া করে ইউপি মেম্বার কামাল হোসেন ও তাদের সমর্থকরা। আলমগীর হত্যা মামলায় অভিযুক্ত তমিজ উদ্দিনের ৬ ছেলে জামিনে বেড়িয়ে আসলেও তাদের এলাকায় ঢুকতে দেয়নি ইউপি মেম্বারের সমর্থকরা।

ফলে বিগত এক বছর ধরে গ্রামের বাইরে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে পরিবারগুলোকে। এছাড়া ৮ কৃষক পরিবার প্রায় দুইশ বিঘা জমিতে বোরো ও আমন মৌসুমে ধান চাষ করতে পারেননি। এতে করে ৩’শ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় কৃষি বিভাগের।

সম্প্রতি বাঁশবাড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ইউপি মেম্বার কামাল হোসেনের তান্ডবলিলা। টিনসেডবাড়ির ঘর গুলোতে ছড়ানো ছিটানো রয়েছে জামা-কাপড়। দরজা-জানালায় আগাছা জম্মে গেছে। ভাংচুরের চিহ্ন তান্ডবলিলার ভয়াবাহতা মনে করিয়ে দিচ্ছে। এরই মধ্যে গ্রামে সংবাদিক আসার পৌছে গেছে গ্রামের মাতব্বর ও প্রভাবশালী ইউপি মেম্বার কামাল হোসেনের কাছে। মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রæতই ছুটে চলে আসলেন তিনি।

এসময় কথা হয় ইউপি মেম্বার কামাল হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, এখানে গ্রামবাসী যারা আছে ওদের সাথে কোন ভাবেই তাদের আপোষ হচ্ছে না। তাই এলাকাবাসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে কবরস্থানের জায়গা ক্লিয়ার হবে এর পরে ওদের সম্পদে ওরা চলে আসবে।

এটা কি আইনে পারেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে মেম্বার কাামাল হোসেন বলেন, এটা আইনের কথা না। আইন কিন্তু আমার আপনার মত লোক দ্বারাই সৃষ্টি হয়। এটা একটা সমাজ, এই সমাজকে মেইনটেইন করে চলতে হবে। সমাজের বাহিরে তো কেউ না। এখানে দশ ঘর মানুষ একদিকে আর সত্তর ঘর মানুষ একদিনে। তাই এই গ্রামে গ্রাম প্রধানদের নির্দেশই আইন।

ইউপি মেম্বার কামাল হোসেনের সাথে সুর মিলিয়ে স্থানীয় গ্রাম প্রধান মিজানুর রহমান বলেন, গ্রামের গুটি কয়েক কৃষকের সামান্য জমি চাষাবাদ করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত সামাজিক ভাবেই নেয়া হয়েছে। এটা কারও একক সিদ্ধান্ত নয়। কারণ ওই কৃষকেরা কবরস্থানের একটি জমি দখল করে রেখেছে। তাই জমি না ছেড়ে দিলে তাদেরকে জমিতে যেতে দেয়া হবে না।

অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক আনিছুর রহমান বলেন, একটি হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে ৮মাস ধরে ৫ পরিবার গ্রাম ছাড়া। আর মেম্বার কামাল হোসেনের নেতৃত্বে চালানো হয়েছে ওই বাড়ি-ঘরে লুটপাট। গত দুই মৌসুম ধরে অনাবাদি রয়েছে প্রায় ২শ বিঘা ধানি জমি। লুটে নেয়া হয়েছে ৯টি শ্যালো মেশিন, মোটর ও পুকুরের মাছ।

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক লাবু মিয়ার স্ত্রী শাহানাজ বেগম বলেন, কামাল মেম্বারের তান্ডবে এলাকার কেউ কথা বলার সাহস পায় না। তাদের ছেলে-মেয়ে ও পরিবারের লোকদের একঘরে করে রাখা হয়েছে। তারা খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

গ্রাম্য শালিসে জমি চাষাবাদ করতে না দেওয়ার কারনে অনাবাদি পড়ে রয়েছে জমিগুলো।

এদিকে, ৮ মাস ধরে জমিতে ধান চাষ করতে না পেরে গত ২৭ আগস্ট প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে আলমগীর হত্যা মামলার অভিযুক্ত ও তমিজ উদ্দিনের ছেলে অধ্যাপক আব্দুস সালাম সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশ সুপার সহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেন। কিন্তু আবেদনের একমাস পেরিয়ে গেলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

অভিযোগ কারী অধ্যাপক আব্দুস সালাম বলেন, কামাল মেম্বার এলাকার একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে সিংড়া থানায় হত্যা, চাঁদাবাজি সহ একাধিক মামলা রয়েছে। তার নির্যাতন থেকে নিরীহ কৃষক পরিবার গুলো মুক্তি চায়। তিনি প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেন।

এবিষয়ে সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, জমিজমা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে একটা সংঘর্ষ হয় এবং সেখানে একজন নিহত হয়। এঘটনায় থানায় একটি মামলা রয়েছে। আর কৃষকরা জমিতে যেতে পারছে না বা তারা আবাদ করতে পারছে না বিষয়টি সম্পর্কে অবগত না। তবে যদি এমন হয় তিনি খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, আবেদনটি তার নজরে আসেনি। কোন মামলা থাকলে আদালত দেখবে, পুলিশ দেখবে। কিন্তু দুইশ বিঘা জমি অনাবাদি থাকবে এটা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আর এখানে প্রাথমিক ভাবে জানতে পারলাম আমার একজন ইউপি মেম্বার জড়িত। সে স্থানীয় সরকারের একটা অংশ। আমার রাষ্ট্রের উৎপাদন নষ্ট করে একজন জনপ্রতিনিধি সহযোগী না করে সেখানে উল্টো জনগনকে আরো উসকে দেয়। তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।

Previous articleগুরুদাসপুরে দুই মাথা বিশিষ্ট শিশুর জন্ম
Next articleনলডাঙ্গায় ৩ প্রতিষ্ঠানে ২৩ হাজার টাকা জরিমানা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here