Home বিবিধ সুবাসিত সুগন্ধি ফুল নাগলিংগম

সুবাসিত সুগন্ধি ফুল নাগলিংগম

669
0

বৃক্ষ প্রজাতির উদ্ভিদের কান্ড ভেদ করে চারিদক আলোকিত ও সুবাসিত করে ফুলের মাধুর্যে মুখরিত করে এই ফুলচির নাম নাগলিংগম। ইংরেজিতে বলে Cannonball. বৈজ্ঞানিক নাম Couroupita guianensis, Lacythidaceae পরিবারের সদস্য।

নাগলিংগম সুউচ্চ চিরসবুজ বৃক্ষ। নাগলিঙ্গম আবিষ্কৃত হয় প্রায় তিন হাজার বছর আগে আমাজানের জঙ্গলে। ১৭৫৫ সালে ফ্রান্সের উদ্ভিদবিদ জেএফ আউবেল্টের নামকরণ করেন Cannon ball. নাগলিঙ্গম নামটি সংস্কৃত হতে নেয়া। তাই এর কোনো বাংলা নাম নেই।

নাগলিঙ্গমের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল কাণ্ড থেকে বের হওয়া সাদা, সর্নালী, লাল হলুদের মিশ্রণে উজ্জ্বল বড় বড় ফুল। ফুলটির রং, মিষ্টি গন্ধ, পাপড়ি বিন্যাস সবাইকে মুগ্ধ করার মতো। নাগের ফণার মতো বাঁকানো এর পরাগচক্র। ঠিক এমনটি আমাদের দেশের অন্য কোনো ফুলে নেই। পরাগদণ্ড সাদা কিংবা ম্লান গোলাপি ও মাংসল এবং প্রান্ত গর্ভমুণ্ডের ওপর উদ্যত। পাপড়ি ছয়টি ও পুরু। পরাগদণ্ডের শেষে অজস্র পুংকেশর রয়েছে। শুরুতে আরও অসংখ্য যেসব মৃদু হলুদ পুংকেশর আছে সেগুলো বন্ধ্যা। গাছে সারা বছর অনবরত ফুল ফোটে। তবে বসন্ত ও গ্রীষ্মে ফুল বেশি ফোটে। যেসব গাছে ফল হয় না সেসব গাছে সব সময়ই ফুল ফোটে। গ্রীষ্মকাল পাতা ঝরার সময়। কিন্তু বছরে কয়েকবারই পাতা ঝরে, পাতা গজায়। মঞ্জুরিদণ্ডে একটির পর একটি ফুল ফুটতে থাকে। গাছের চারপাশে ঘিরে থাকে মৌমাছি, প্রজাপতি ও বিভিন্ন পতঙ্গ। ফল গোলাকৃতির, মাংসল, বড় ও বাদামি রঙের। ফল কামানের গোলার মতো বড় হয় বলে এই উদ্ভিদকে ইংরেজিতে ‘Cannon ball tree’ বলে।

দক্ষিণ আমেরিকার উষ্ণমণ্ডলে নাগলিঙ্গমের আদিনিবাস। ঢাকার বলধা গার্ডেন, বোটানিক্যাল গার্ডেন, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের বাগানে, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হ দেশের বিভিন্ন স্থানে নাগলিঙ্গম গাছ দেখা যায়। তবে উদ্ভিদটি এদেশে সংখ্যায় অনেক কম। পেটের পীড়া, চর্মরোগ এবং কাটা-ছেঁড়ায় এর রসে উপকার পাওয়া যায়। তাছাড়া ফলের বীজ ক্ষতিকারক পোকামাকড় দমনে বিশেষভাবে কার্যকর। গাছের প্রতিটি ফলে ২০০ থেকে ৩০০ পর্যন্ত বীজ থাকে।

অনেক আগে থেকেই গাছটি ভারত উপমহাদেশে একটি পবিত্র উদ্ভিদ বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। শিবমন্দিরে নাগলিঙ্গম গাছের বিশেষ কদর রয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শিব পূজায় নাগলিঙ্গম ফুল ব্যবহার করে। এমনকি এ গাছকে ভারতে ‘শিব কামান’ নামে ডাকা হয়। বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে নাগলিঙ্গম যত্নে রোপণ করা হয়। এ কারণে থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, মিয়ানমারের বৌদ্ধমন্দির প্রাঙ্গণে নাগলিঙ্গম গাছ বেশি দেখা যায়।

Previous articleমাগফিরাত – ইসাহাক আলী
Next articleনাটোরে আমের পর এবার লিচুতে ফ্রুট ব্যাগিং!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here