
নিজস্ব প্রতিবেদক, গুরুদাসপুর:
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের দেবোত্তর গরিলা গ্রামে সামাজিক ফতোয়া দিয়ে একটি অসহায় পরিবারকে একঘরে করে রাখার ঘটনার অভিযোগে গ্রাম্য মাতব্বর ৬নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মোসাব্বের আলী ও ফতোয়াবাজ মাওলানা মনিরুজ্জামানসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, শনিবার (১৩ জুন) গ্রাম্য মাতব্বর ওসমান, রমজান, ও ইউপি সদস্য মোসাব্বের আলী যোগসাজশ করে রানীনগর মসজিদের সামাজিক বিচার বসান। বিচারে শ্বাশুরী-জামাইকে উপস্থিত রেখে শরীয়ত পরিপন্থী অপরাধের জন্য তওবা পড়ান ইমাম মনিরুজ্জামান।
এ কারনে শ্বাশুড়ীর মেয়ে আর জামাইয়ের স্ত্রী থাকলো না বলে ফতোয়া দেন ওই মাওলানা। এরপর বাধ্য হয়েই স্বামীর ঘর ছেড়ে দুই সন্তানসহ মায়ের বাড়িতে অবস্থান নিতে হয় মেয়েকে। সেদিন থেকেই মা মেয়েকে একঘরে করে রাখা হয়। এরপর পরিবারটি সমাজের চোখে ধিকৃত ও অবজ্ঞার শিকার হয়। সোমবার (১৫জুন) এ ঘটনার খবর পেয়ে গুরুদাসপুর থানা পুলিশ মা মেয়েকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
অভিযোগ অস্বীকার করে ভুক্তভোগী ওই নারী (৫০) বলেন, ৮জুন সোমবার রাত ৮টার দিকে রানীনগর মোল্লাপাড়া হয়ে জামাইকে সাথে নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় একই গ্রামের শুকচাঁদ, কামরুল, আতহার ও আলামিন নামে চার যুবক তাদের পথরোধ করে। অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ এনে তাঁদের (জামাই-শ্বাশুরী) বেঁধে শারীরিক নির্যাতন করে।
এক পর্যায়ে তাদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকার দাবী করে। টাকা না দেওয়ায় অপপ্রচার চালিয়ে মাঝরাতে ছেড়ে দেয় তারা। পরে মাতব্বররা ১৩জুন তাদের বিরুদ্ধে বিচার বসিয়ে ওই মিথ্যা ফতোয়া মাওলানা ডেকে নিয়ে এসে দেওয়ানো হয়।
ভুক্তভোগীর মেয়ে জামাই বলেন, মিথ্যা ফতোয়া দিয়ে তার স্ত্রীকে আলাদা করা হয়েছে। আইনের আশ্রয় নিতেও ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে।
তবে ইউপি চেয়ারম্যান শওকত রানা লাবু বলেন, বিষয়টি জানার পরে থানার ওসিকে অবহিত করেছি।
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাহারুল ইসলাম বলেন, ওই গ্রামের মাতব্বর ও ফতোয়াবাজদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী মেয়ের মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন এবং ৮জন আসামীকে আটক করে নাটোর কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। দ্রুত বাঁকী আসামীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
