Home মুক্তমত হতদরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের অপেক্ষার প্রহর!

হতদরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের অপেক্ষার প্রহর!

591
0

১ম ছবি- নাটোর জেলা প্রশাসক মহোদয়ের Post থেকে নেয়া। সদর উপজেলার ছাতনী উচ্চবিদ্যালয় থেকে রাকিব হোসেন নামে এসএসসি পরীক্ষার্থী বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ গোল্ডেন পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে তার বাধা দারিদ্রতা। পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরে নাটোরের জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ শাহরিয়াজ মহোদয় নগদ দশ হাজার টাকা প্রদান করেন এবং লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন।

২য় ছবি- Riazul Islam Rizu এর পোষ্ট থেকে নেয়া। এরা সদর উপজেলার আগদীঘা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী সুমা খাতুন ও শিলা রাণী। এরা উভয়েই জিপিএ ৫ পেয়েছে । সুমা খাতুনের বাবা শফিকুল ইসলাম একজন ভ্যান চালক। তার মা অন্যের বাড়ী ও জমিতে দিনমজুরের কাজ করে। সুমা তাদের বড় সন্তান। সে জেএসসি ও পিএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছিল। অপরদিকে শিলা রানীর বৃদ্ধ বাবার কোন রোজগার নেই। মা অসুস্থ। পরিবারে রোজগারের মত আর কেউ নেই। দু’কাঠা জমির ওপরে ছোট্ট নড়বড়ে একটি বাড়ি ছাড়া তাদের আর কোন সহায় সম্পত্তি নাই। সংসারে নেই কোন ছেলে সন্তানও। শিলারা পাঁচ বোন। বড় তিন বোনকে বিয়ে দিতেই বাবার সহায় সম্বল সব শেষ। সহায় সম্বলহীন এ ২ মেয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য আশায় বুক বেঁধে আছে। পত্রিকায় এদের কথা না আসায় হয়তো প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হয়নি। সম্প্রতি কয়েকটি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বেশ কিছু মেধাবী পরিবারের করুন কাহিনী বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

যে কথা বলতে চাই
*****************
এরকম হাজারো রাকিব হোসেন ও সুমা-শিলা রাণীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন নাটোর জেলার বিভিন্ন গ্রাম গঞ্জে।যারা পত্রিকায় দৃশ্যমান হতে পারেনি- তাদের আশা রয়ে গেছে দুরাশাতেই। অধিকাংশরাই লোক লজ্জার কারণে পত্রিকার খবর হতে চায়না।

এসব রাকিব হোসেন ও সুমা-শিলাদের কথা চিন্তা করে সময়ের সাহসী সন্তান নাটোর জেলার প্রাক্তন জেলা প্রশাসক জনাব জালাল উদ্দিন আহমেদ ১৯৮৭-৮৮ সালে শিক্ষা ফাউন্ডেশন নামে একটি তহবিল চালু করেছিলেন।বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের অনুদান প্রাপ্তির মাধ্যমে অত্যন্ত প্রতিকুল পরিবেশে সাহসিকতার সাথে অর্থ সংগ্রহ করতে থাকেন। সে সময়ে এখাতে অনুদানের মোট পরিমান ছিল ১৪ লক্ষ টাকা। এটির মুল্য লক্ষ্য ছিল,- এ অর্থ থেকে অর্জিত সুদ প্রতি বছর মেধাবী ছাত্রদের অনুদান হিসেবে দেয়া হবে। শুরুও হয়েছিল, অনেক অর্থ অনুদান হিসেবে প্রদানও করা হয়েছিল। তারপর এটি থেমে যায়। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক জনাব সদর উদ্দিন আহমেদ এটি শিক্ষা ফাউন্ডেশনের পরিবর্তে ”নাটোর ফাউন্ডেশন” নামকরণ করেন। এতে প্রতিষ্ঠাতা জালাল উদ্দিন স্যার খুবই মনোকষ্ট পেয়েছিলেন।পরের ইতিহাস শুধুই অপেক্ষা। অবশেষে প্রাক্তন জেলা প্রশাসক জনাব শাহিনা খাতুন সাহসিকতার সাথে এর কার্যক্রম শুরু করেন। কিন্তু তাঁর বদলিজনিত কারণে এটি আবারো গতি হারায়। বর্তমানে এ মুল টাকা সুদাসলে ৭০ লক্ষ টাকার অধিক হয়েছে।

দান কিংবা সাহায্য নয়। নাটোর জেলার মেধাবী ও হতদরিদ্র শিক্ষার্থীরা এ টাকার হকদার। ইতোমধ্যে বর্তমান জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ শাহরিয়াজ মহোদয় আর্থিক সীমাবদ্ধতার মাঝেও তাঁর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে মেধাবী শিক্ষার্থী ও দুঃস্থ মানুষদের চিকিৎসা বাবদ সাধ্যমত আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছেন। তাঁর মানবিক উদারতা দেখে আমার মনে আবারো আশার সঞ্চার হয়েছে। মনে হচ্ছে,- অপেক্ষার প্রহর বুঝি শেষ হলো। শিক্ষা ফাউন্ডেশন নামক তহবিলটি অভাবগ্রস্থ শিক্ষার্থীদের মাঝে আবারো নতুনকরে এনে দেবে স্বস্তি ও শান্তির বারতা। আর তাই যদি হয়, তবে জয় হবে মানবতার, শান্তি পাবে মরহুম জালাল উদ্দিন-এর আত্মা।

লেখক: মনিমুল হক, সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা, নাটোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়।

Previous articleঈদ উপলক্ষে গুরুদাসপুরে বিভিন্ন দোকানে অভিযান
Next articleনাটোরে পুলিশ সুপারের ঈদ বাজার পরিদর্শন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here