Home শিরোনাম হেনা স্বাবলম্বী হয়ে স্বপ্ন দেখাচ্ছে অন্যদের

হেনা স্বাবলম্বী হয়ে স্বপ্ন দেখাচ্ছে অন্যদের

580
0

এনামুল হক বাদশা
আজ থেকে সেই ৮ বছরের আগের কথা। তখন অভাব অনাটনের সংসার ছিল হেনা সুলতানার। স্বামী বিভিন্ন ব্যবসা করে লোকসান খেয়ে এক সময় বেকার হয়ে পড়েন। হেনার সংসারের অভাব আরও বাড়তে থাকে। ছেলে মেয়ের লেখা পড়াও এক রকম বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে ধার দেনা ও ঋণ করে সংসার চালাতে গিয়ে বেড়ে যায় ঋণের বোঝা। সেই সাথে দিন দিন বাড়তে থাকে সংসারের কলহ আর অশান্তি। সংসারের এমন দুদর্শার সময়ে হেনা সুলতানা ভেঙ্গে না পড়ে মনোবল শক্ত করেন। নিজের ইচ্ছা শক্তি বাড়িয়ে বাড়িতে থাকা পুরনো মেশিন দিয়ে শুরু করেন সেলাইয়ের কাজ। সে বছর ঈদকে সামনে রেখে কাজের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। পাড়ার মেয়েরা ব্লাউজ, ফ্রগ তৈরী সহ নানান রকম সেলাই করার কাজ নিয়ে বাড়িতে ভীড় জমান। ভালো কাজ পেয়ে খুশি হন ক্রেতারা। দর্জির আয়ে সংসার চালান হেনা সুলতানা। ধীরে ধীরে মুক্ত হতে থাকে আগের ধার দেনা। এবার নড়ে চড়ে উঠেন স্বামী আব্দুল মান্নান। দর্জির ব্যবসায় আয়ের উৎস ভালো দেখে স্ত্রী হেনা সুলতানার কাজে বাড়িয়ে দেন সহযোগিতার হাত। এভাবেই গ্রামের বাড়িতে কেটে যায় একবছর।

পরের বছর স্বামীর সহযোগিতায় বগুড়ায় দর্জির প্রশিক্ষণ নেন হেনা সুলতানা। এবার স্বাবলম্বী হওয়ার পালা। সিংড়া বাজারে তখন মেয়েদের একক কোন দর্জির দোকান ছিলনা। হেনা সুলতানাই একমাত্র সাহসী নারী যিনি কোন সংকোচ বোধ না করে সিংড়া বাজারে প্রথম দর্জির দোকান শুরু করে সিংড়া উপজেলা নারী উদ্যোক্তা হিসাবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। মাত্র ৮ বছরেই ঘুরে যায় ভাগ্যের চাকা। যায় পথ ধরে অনেক নারীই এখন দেখছেন আগামীর দিনে হেনা সুলতানার মত স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন।
সিংড়া বাজারের পান পট্টি সংলগ্ন হেনা সুলতানার সেই ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা রাজধানী লেডিস টেইলার্সে গিয়ে দেখা যায় ৭ থেকে ৮ জন মেয়ে দর্জির কাজ করছেন। কেউ কাপড় কাটছেন, কেউ করছেন সেলাই আবার কেউবা তৈরী পোশাক ইস্ত্রির কাজে ব্যস্ত।
হেনা সুলতানা বলেন, আমার এই দর্জির কারখানায় মোট ৯ জন মেয়ে কাজ করেন। এর মধ্যে ৫-৬ বছর ধরে আমার দোকানে কাজ করা অনেক মেয়ে তাঁদের বাড়িতে আমার মত কারখানা দিয়ে কাজ শুরু করেছেন।
হেনা বলেন,এক সময় দরিদ্রের সাথে লড়াই করেছি।এখন আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। নিজের চেষ্টায় একটা কিছু করতে পেরেছি এটাই অনেক ভালো।
হেনা আরও বলেন,এ পর্যন্ত সরকারী কোন সহযোগিতা পাই নাই। সহযোগিতা পেলে কারখানার পরিধি আরও বাড়াবো। এতে আরও অনেক মেয়ে হাতে কলমে কাজ শিখে তারাও এক সময় স্বাবলম্বী হতে পারবে।
হেনা সুলতানার স্বামী আব্দুল মান্নান বলেন, স্ত্রীর কারখানার কাজে আমি সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে আসছি। এখান থেকে মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় হয়। এক মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। ছেলেটা পড়ছে পঞ্চম শ্রেণীতে। এই কারখানার আয়ে ১০ বিঘা জমি কিনেছি। জায়গা কিনে বাড়ি করেছি। আল্লাহর রহমতে আমরা অনেক সুখে আছি। আমার স্ত্রী এই উদ্যোগ না নিলে আমাদের সংসারে হয়তো আগের মত অভাব লেগেই থাকতো।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আফছার আলী মন্ডল বলেন, রাজধানী লেডিস টেইলার্সের মালিক হেনা সুলতানা যে ভাবে ব্যক্তি উদ্যোগে বাজারে কারখানা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তাতে বাড়িতে কাজ না করে মেয়েরা যদি এভাবে বাজার মুখি হয় তাহলে তারাও হেনা সুলতানার মত স্বাবলম্বীর মুখ দেখবে বলে আমি প্রত্যাশা করি।
তিনি আরও বলেন, সিংড়া উপজেলা সদরে রাজধানী টেইলার্স ছাড়াও অনেক সম্প্রতি অনেক বিউটি পার্লারের ব্যবসা গড়ে উঠেছে যেখানে অনেক মেয়েরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
মেয়েদের এই সব গুলো প্রতিষ্ঠান নিয়ে একটি আলাদা মার্কেট করার পরিকল্পনা আছে। যেখানে ক্রেতা বিক্রেতা সবাই থাকবেন নারী। সরকারী সহযোগিতা পেলে অচিরেই এই উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

Previous article“জাগো বাহে, কোনঠে সবাই”
Next articleভাতা বাড়লো সরকারি চাকরিজীবীদের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here