Home শিরোনাম ১৪ লাখ দিয়েও দুই লাখ টাকার ঋণ শোধ হয়নি!

১৪ লাখ দিয়েও দুই লাখ টাকার ঋণ শোধ হয়নি!

214
0
সুদ ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ব

জীবিকার তাগিদে তিন বছর আগে প্রতিবেশীর কাছ থেকে সুদের ওপর দুই লাখ টাকা নিয়েছিলেন এক দম্পতি। প্রথম ঋণদাতার টাকা পরিশোধ করতে আরও তিনজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন। এ পর্যন্ত ১৪ লাখ টাকা দিয়েও সেই ঋণ পরিশোধ হয়নি। বরং পাওনাদারদের হিসাবে এখনো তিনি ১১ লাখ টাকা ঋণী।

নাটোর জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে প্রতিকার চেয়ে লিখিত আবেদনে এই দাবি করেছেন সদর উপজেলার রামাইগাছি গ্রামের শাহ আলম ও শিরিন বেগম দম্পতি। বৃহস্পতিবার করা আবেদনে এই দম্পতি বলেছেন, ঋণ পরিশোধে সব জায়গাজমি বিক্রির পর অবশিষ্ট রয়েছে শুধু বসতভিটা। সেখান থেকে তিন শিশুসন্তানসহ তাঁদের উচ্ছেদের চেষ্টা চলছে।

শাহ আলম পেশায় একজন মেডিকেল টেকনিশিয়ান। স্ত্রী শিরিন বেগম গৃহিনী। তাঁদের ঘরে রয়েছে তিন শিশুসন্তান।

ভুক্তভোগীদের লিখিত আবেদন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সংসারের স্বচ্ছলতা বাড়াতে তিন বছর আগে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার খোলেন শাহ আলম। এ সময় প্রতিবেশী মাসুম আলী স্ত্রী লাকি বেগমের কাছ থেকে সুদের ওপর দুই লাখ টাকা নেন। প্রতিষ্ঠানে যা আয় হতো, তার বেশির ভাগ চলে যেত সুদের টাকা পরিশোধে। কিন্তু করোনা মহামারিতে ব্যবসায় টান পড়ে। ঘরভাড়া আর সংসার খরচ জোগানোই মুশকিল হয়ে পড়ে। সুদের বকেয়া টাকা ঋণের মূল টাকার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে। ঋণদাতা সুদ আর বাকি রাখতে চান না। বাধ্য হয়ে আরও দুজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে প্রথম ঋণদাতার সুদ পরিশোধ করতে থাকেন তাঁরা। এতে ঋণ ও সুদের ভার আরও বাড়তে শুরু করে। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া দুই বিঘা জমিও বিক্রি করে দেন। এখন রয়েছে চার শতকের শুধু বসতভিটা ও আধা পাকা একটি ঘর।

গ্রামের সুদখোরদের মায়া–মমতা বলে কিছু নাই। তারা শুধু টাকা নিয়েই যাচ্ছে, শোধ হচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়ায় না। তাদের রয়েছে পোষা মাস্তান।

ঋণদাতাদের দাবিমতে, বুধবার পর্যন্ত তাঁকে ঋণমুক্ত হতে হলে আরও ১১ লাখ টাকা লাগবে। এ হিসাব শুনে তাঁদের দুঃচিন্তার শেষ নাই। এদিকে ঋণদাতারা তাঁর ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আসেন টাকা আদায়ের জন্য। এমনকি প্রতিষ্ঠানে তালা দেওয়ার হুমকি দেন। এ অবস্থা দেখে ডায়াগনস্টিকের বাড়ির মালিক বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন

শাহ আলম বলেন, ‘আমাদের আর বাঁচার সুযোগ নাই। চড়া সুদের ফাঁদে আমরা আটকা পড়েছি। দুই লাখ টাকার ঋণ এখন ১১ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। শিশুসন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য কিছুই রেখে যেতে পারছি না। তাই ভেবেছিলাম, পরিবারের সবাই আত্মহত্যা করব। কিন্তু কিছু প্রতিবেশীর বাধার মুখে আমরা প্রাণে বেঁচে আছি।’

প্রতিবেশীদের পরামর্শেই জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে ঋণের ফাঁদ থেকে বাঁচার জন্য দরখাস্ত দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ঋণদাতারা চালাকি করে ফাঁকা স্ট্যাম্প ও চেকে সাক্ষর করে নিয়েছেন। তাঁরা এখন সেসব স্ট্যাম্পে নানা কিছু লিখে টাকার দাবি করছেন।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানেন, মাসুম আলীর স্ত্রী লাকি সুদের ব্যবসা করেন। তবে তাঁদের ভয়ে কেউ নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে লাকি বেগমের স্বামী মাসুম আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি রংমিস্ত্রির কাজ করেন। তাঁর স্ত্রী বাসায় ছিট কাপড় বিক্রি করেন। সুদের ব্যবসা করেন না। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অংশীদার হওয়ার জন্য শাহ আলমকে তাঁর স্ত্রী সাত লাখ টাকা দিয়েছিলেন। এক বছর ভালোই লাভ দিয়েছিলেন। কিন্তু অনেক দিন হলো একটি টাকাও লাভ দেননি। অংশীদারত্বের কাগজ আছে বলে তিনি দাবি করেন।

সরেজমিনে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় ব্যক্তিরা জানেন, মাসুম আলীর স্ত্রী লাকি সুদের ব্যবসা করেন। তবে তাঁদের ভয়ে কেউ নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

শাহ আলমের স্ত্রী শিরিন বেগম বলেন, ‘আমাদের মতো ভুল যেন আর কেউ না করে। গ্রামের সুদখোরদের মায়া–মমতা বলে কিছু নাই। তারা শুধু টাকা নিয়েই যাচ্ছে, শোধ হচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়ায় না। তাদের রয়েছে পোষা মাস্তান। কিছু বললেই তারা হুঙ্কার দিয়ে ওঠে।’

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, শাহ আলম-শিরিন দম্পতির দরখাস্ত পেয়েছেন। তাঁরা সুদের ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

সূত্র: প্রথম আলো।

Previous articleসিংড়ায় সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদ সভা
Next articleঅনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় ক্রিকেট দলে অভিষেক হচ্ছে নাটোরের ছেলে শাকিলের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here