
নিজস্ব প্রতিবেদক
নাটোরের সিংড়ায় ‘চলনবিল মহিলা ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি শাখা ১৫ বছরেও এমপিওভুক্ত করা হয়নি। চলতি বছর উপজেলার ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভূক্ত করা হয়েছে। অথচ অবকাঠামো ও শিক্ষার্থী থাকা সত্বেও চলনবিল মহিলা ডিগ্রি কলেজ এমপিও করা হয়নি।
ফলে বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন ওই কলেজের ৪৫শিক্ষক কর্মচারী। এমপিও না হওয়ায় শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ সবাই হতাশ হয়ে পড়েছেন।
নারী শিক্ষার মান উন্নয়নে ১৯৯৫সালে সিংড়া চলনবিল মহিলা ডিগ্রি কলেজকে উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠদানের অনুমতি দেওয়া হয়। শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিক ভাবে ভালো ফলাফল করে আসছে। স্ বল্প সময়ে উপজেলায় সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে কলেজটি।
উপজেলার একমাত্র মহিলা ডিগ্রি কলেজটিতে ২০০৫সালে ডিগ্রি কোর্স চালু করা হয়। বর্তমানে কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৪৭ জন, ডিগ্রির পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৪৮জন এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৪১জন। ডিগ্রি কোর্স চালু থেকে ফলাফলও সন্তোষজনক। চলনবিল মহিলা ডিগ্রি কলেজের মাধ্যমিকে শিক্ষক কর্মচারী ৪২ জন ও ডিগ্রি পর্যায়ে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৪৫জন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বিধি অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এমপিও না হওয়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত এসব শিক্ষক সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষকের চাকরিতে প্রবেশের বয়সও প্রায় শেষের দিকে। অন্য কোনো চাকুরিতে আবেদন করার সুযোগও নাই। হতাশাগ্রস্ত এসব শিক্ষক সরকারি সিদ্ধান্তের আশায় কলেজেই পড়ে আছেন।
বিবিএস শিক্ষার্থী রেমি খাতুন. ইসরাত জাহান চাপা, রিমা পারভীন ও সীমা খাতুনসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী কলেজ অধ্যক্ষের প্রশংসা করে বলেন,মেধাবী ও গরীব শিক্ষার্থীদের নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে পড়ালেখার সুযোগ করে দেন অধ্যক্ষ।
মনোবিজ্ঞানী শিক্ষক গোলাম রাব্বানী বলেন, ভেবেছিলাম নিজেকে আত্মনিয়োগ করবো সম্মানজনক একটি পেশায়। ইচ্ছে ছিল সাধারণ ভাবে জীবন-যাপন করতে। তাই মহান এই পেশা বেছে নিয়েছিলাম। ২০০৫সাল থেকে বিনাবেতনে কলেজে শ্রম দিয়ে যাচ্ছি। দীর্ঘ ১৫ বছরে কোনো বেতন ভাতা পাইনি।
সমাজ বিজ্ঞানীর শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম আক্ষেপ করে বলেন, শিক্ষক হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। আর এই কারিগরদের আজ করুণ অবস্থা। দেখার কেউ নেই, বেতন-ভাতা না থাকায় অনেক কষ্ট করে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে। ছেলে-মেয়েদের জন্য একটি টাকায়ও সঞ্চয় করতে পারিনি।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ড. আব্দুল আলিম জানান,১০বছর পর অনেক অযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও করা হয়েছে। অথচ সিংড়া চলনবিল মহিলা ডিগ্রি কলেজ এমপিও করা হয়নি। তিনি বলেন, মাষ্টার্স পাশ করার পরও বেকারত্ব জীবন যাপন করছি। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সও প্রায় শেষের দিকে। নিজের ও ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যত বলতে কিছুই নেই। আমাদের রাষ্টীয় ও সামাজিক মর্যাদাও হারিয়ে গেছে।
চলনবিল মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, নারী শিক্ষার মানোন্নয়নে ২০০৫সালে কলেজটিতে ডিগ্রি কোর্স চালু করা হয়। উপজেলার একটি মাত্র মহিলা ডিগ্রি কলেজ। এমপিওর জন্য অনলাইনে আবেদনও করা হয়েছে। কিন্তু কি কারণে তালিকা থেকে বাদ পড়েছে তা আমার জানা নেই।
তিনি আরও বলেন, কলেজটি এমপিও করা হলে শিক্ষকদের পাঠদানের স্পৃহা আরো বাড়বে। নারী শিক্ষার মান উন্নয়নে চলনবিল অধ্যুষিত মহিলা ডিগ্রি কলেজটি এমপিওভূক্ত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনির হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সিংড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আমিনুর রহমান বলেন,অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থীসহ সব কিছুই ঠিক আছে। তবে কেন এমপিওভূক্ত হয়নি,তা আমার জানা নেই। সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, এমপিও’র বিষয়ে আমার কিছু করার নেই। এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিষয়।
