Home বিশেষ সংবাদ ৩ কোটি টাকা মূল্যের জমি দখলের চেস্টা আ’লীগ নেতার

৩ কোটি টাকা মূল্যের জমি দখলের চেস্টা আ’লীগ নেতার

503
0
লালপুরে আ'লীগ নেতার বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোরের লালপুর উপজেলায় এক আওয়ামীলীগ নেতা দলীয় অফিসের নাম করে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকার জমি দখলের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে আওয়ামীলীগ অফিসের নামে নির্মাণ কাজ শুরু করলে তা বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

তবে ওই আওয়ামীলীগ নেতা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, জমিটি তিনি লীজ নিয়েছেন। পার্টি অফিস নয় বরং ওই জমিতে তিনি আধাপাকা ঘর নির্মাণ করতে চান। অভিযুক্ত মাহমুদুল হক মুকুল লালপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

ভুক্তভোগী লালপুরের তিলকপুর এলাকার আকছেদ আলীর ছেলে আবুল কালাম জানান, ব্রিটিশ আমলে পুঠিয়া রাজ ট্রাস্ট এস্টেট থেকে তার বাবা ৩৭ শতক জমি ডাক্তার খানা করার জন্য পত্তন পান৷ জমিটির জেএল নম্বর ১৯৭, খতিয়ান নম্বর ৪ ও দাগ নং ২২৬। সিএস খতিয়ানে জমিটি ৩৭ শতক থাকলেও এসএ খতিয়ানে এসে দাঁড়ায় ১৪ শতক। ওই জমির খাজনা পরিশোধ করে তার বাবা ডাক্তারী পেশার মাধ্যমে এলাকার মানুষদের চিকিৎসাসেবা দিতেন।

কিন্তু জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের পর দেশ স্বাধীনের পরবর্তি সময়ে আরএস খতিয়ান হওয়ায় ওই জমি ১ নং খাস খতিয়ানে চলে যায়। এসময় জমিটি ২৭৫ দাগসহ বিভিন্ন খন্ডে বিভক্ত হয়। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি আদালতে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। শুনানী চলার এক পর্যায়ে ২০১৮ সালে আদালত থেকে তাকে জমিটির স্বত্ব সম্বলিত কাগজ দেয়া হলেও কোন অজানা কারণে কিছুদিন পর মামলাটি খারিজ করা হয়। কিন্তু জমির স্বত্বের কাগজ থাকায় তিনি মালিক হিসেবে জমিটির দখলে ছিলেন।

কিন্তু সম্প্রতি আওয়ামীলীগ নেতা মুকুল তার জমিতে দলীয় অফিস করার ঘোষণা দিয়ে ঘর নির্মাণ শুরু করে। তিনি বাঁধা দিতে গেলে মুকুল জানায়, ২০০৮ সালে তিনি ওই জমিটি উপজেলা ভূমি অফিস থেকে লীজ নিয়েছেন। পরে উপজেলা প্রশাসনকে জানালে নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হয়। জমিটি বর্তমানে ২০ লাখ টাকা শতক।

উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতার পাশাপাশি বণিক সমিতির সভাপতি হওয়ায় রক্ষক হয়েও তিনি ভক্ষকের ভূমিকায় স্থানীয় দোকানীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে নিজের পকেট ভর্তির পাশাপাশি বিভিন্ন প্রভাবশালী ও প্রশাসনকে ব্যাবহার করে বাজারের সরকারি জায়গা দখল করে নামে-বেনামে বিভিন্ন জনের কাছে ভাড়া দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ভুক্তভোগি অভিযোগ করেন, স্থানীয় এমপির সাহস ও যোগসাজসে ক্ষমতার অপব্যাবহার করে তিনি এ ধরণের চেষ্টা করছেন। তার মামলা ২০১৮ সালে খারিজ হলেও তার আগেই ২০০৮সালে কিভাবে তিনি জমিটি লীজ নিলেন আর কেনই বা মামলাটি খারিজ হওয়ার পর তাকে লীজের সুযোগ না দিয়ে কিভাবে মুকুলকে দেয়া হল প্রশ্ন তুলে তিনি অনতিবিলম্বে বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত শেষে তার পৈত্রিক জমিটির দখল পেতে সরকার ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এব্যাপারে জানতে চাইলে মুকুল দাবী করেন, ২০০৮ সালে তিনি ওই দাগে ৬৪ বর্গফুট জায়গা ও আরো দুইজন সমপরিমান জায়গা লীজ নিয়ে খাজনাও পরিশোধ করেন। এরপর আদালতে মামলা খারিজের পর তাকে নবায়ন দেয়া হয়৷ ২০২১ সাল পর্যন্ত ওই জমির খাজনা পরিশোধ আছে ।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমপির যোগসাজস,ক্ষমতার অপব্যাবহার, চাঁদা আদায় ও দলীয় অফিস করার কথা অস্বীকার করে জানান, আঁধাপাকা দোকানঘরের জন্য তিনি নির্মাণ শুরু করলেও প্রশাসন নিষেধ করায় কাজ বন্ধ রেখে কাজ করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন। অনুমতি পেলে কাজ শেষ করবেন।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মুল বাণীন দ্যুতি জানান, অভিযোগ পেয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সাথে সার্ভেয়ারকে সরোজমিন তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সার্ভেয়ার শাহাদত হোসেন জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নির্দেশ মোতাবেক তিনি মাপজোখ করেছেন।মুকুল সাহেব তার অনুকূলে ৮-৮ ফিট জায়গার যে কাগজ প্রদর্শন করেছেন সেটি হালনাগাদ না থাকায় তাকে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং লিজ হালনাগাদ নবায়ন পূর্বক অনুমোদন নিয়ে কাজ করার জন্য বলা হয়েছে ।

এব্যাপারে এমপি শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, তার সাথে এবিষয়ে মুকুলের কোন কথা হয়নি। সেখানে পার্টি অফিস করার ব্যাপারেও কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। এঘটনায় তিনি কোন ভাবেই জড়িত নন।

Previous articleবিদ্যুৎ বিভাগের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা: বিলের বিলম্ব ফি নেয়ার অভিযোগ
Next articleউপজেলা চেয়ারম্যান আসাদকে গ্রেফতারের দাবী আ’লীগ নেতাদের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here