সার অভিযান

কৃত্রিম সার সংকট: একদিনে নাটোরে ৬ডিলারকে ২লাখ ৬০হাজার টাকা জরিমানা

মাহবুব হোসেন:
রবি-শষ্য এবং বোরো মৌসুমে ফসল ফলাতে গিয়ে প্রয়োজন মতো সার না পাওয়ার অভিযোগ নাটোরের কৃষকদের বেশ কিছু দিন ধরেই। জেলার সার ডিলারদের বিরুদ্ধে কৃত্রিম সংকট তৈরী করে বাড়তি দামে সার বিক্রির অভিযোগও পুরনো নয়। তবে এবার কৃষকদের চাহিদা মতো সার প্রাপ্তিতে কৃত্রিম সার সংকট দূর করতে ডিলারদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে উপজেলা প্রশাসন।

রবিবার এবং সোমবার এই দু’দিন জেলার তিন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ৭ সার ডিলারকে ৪লাখ ৬০হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, নাটোর জেলায় মোট ১৩০জন বিসিআইসি ও বিএডিসি ডিলার রয়েছে। এসব ডিলারের মাধ্যমে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি এবং এমওপি সার প্রান্তিক কৃষকদের দোঁড়গোড়ায় পৌছানো হয়। কিন্তু গতবছরের নভেম্বর মাস থেকেই রবি-শষ্য ফসল ফলাতে গিয়ে তীব্র সার সংকটে ভুগছেন জেলার প্রান্তিক কৃষকরা। সরকার নির্ধারিত ইউরিয়া সার ১হাজার ৩৫০টাকার জায়গায় ১হাজার ৬৫০টাকা, টিএসপি ১হাজার ৩৫০টাকার স্থলে ১হাজার ৬৫০টাকা, ডিএপি ১হাজার ৫০ টাকা স্থলে ১হাজার ৩৫০টাকা এবং এমওপি ১হাজার টাকার জায়গায় ১হাজার ২০০টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেন কৃষকরা। প্রতিটি ৫০কেজির সারের বস্তায় কৃষককে ৩০০ থেকে ৪’শ টাকা বাড়তি দাম দিয়ে সার কিনতে হয়েছে। তাছাড়া কোন কোন সময় ডিলারদের কাছে সার নেই বলেও কৃষককে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এই অবস্থায় রবিবার জেলার সিংড়া বাজারে অবস্থিত বিসিআইসি ডিলার চলনবিল ট্রেডার্স এর মালিক আবু বক্কর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে সার গুদামজাত করে রাখা এবং কৃষককে সার না দেওয়ার অভিযোগে ভ্রাম্যান আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম। এসময় বিসিআইসি ডিলার আবু বক্কর সিদ্দিককে ২লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমান আদালত। এসময় উপজেলা কৃষি অফিসার খন্দকার ফরিদ সহ অন্যান্যেরা উপস্থিত ছিলেন।

অপরদিকে, জেলার নলডাঙ্গা উপজেলায় সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির দায়ে দুই ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রামমান আদালত। দুপুরে নাটোর সেনাবাহিনী, উপজেলা কৃষি অফিস, নলডাঙ্গা থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে নলডাঙ্গা বাজারের মেসার্স মন্ডল এন্ড কোম্পানীর স্বত্বাধিকারী আকতার হোসেনকে ২৫ হাজার টাকা ও মেসার্স ভাই ভাই ষ্টোরের স্বত্বাধিকারী নাসির উদ্দিন হককে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এসময় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিকুর রহমান।

এবিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার কিশোয়ার হোসেন জানান, উত্তরবঙ্গের শস্যভান্ডার খ্যাত হালতিবিল কৃষি প্রধান এলাকা। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে বাজারে বিশৃঙ্খলা করছে। এই অভিযোগে বাজারে অভিযান পরিচালনা করছে যৌথবাহিনী।

এদিকে, একই দিনে জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলায় সার গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৪জন সার ডিলার মালিককে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হা-মীম তাবাসসুম প্রভা।

তিনি জানান, দীর্ঘ দিন ধরে কৃষকরা সার না পাওয়ার অভিযোগ নিয়ে তার কাছে আসছিলেন। অথচ সরকার জেলায় পর্যাপ্ত পরিমানে সার বরাদ্দ দিয়ে আসছে। তারপরও এক শ্রেণীর অসাধু ডিলার সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কৃষকদের কাছে বাড়তি দামে সার বিক্রি করে আসছে। কৃষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সোমবার দয়ারামপুর ইউনিয়নের তালতলা বাজারে শরিফুল ইসলামকে ৩০ হাজার টাকা, বাটিকামারী বাজারে জাহাঙ্গীর আলমকে ৫০ হাজার টাকা, দয়ারামপুর নন্দীকুজা বাজরে আবু মোহাম্মদকে ৫০ হাজার টাকা এবং বাগাতিপাড়া পৌর এলাকার মালঞ্চি বাজারে মুক্তার হোসেনকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হা-মীম তাবাসসুম প্রভা বলেন, বরাদ্দ থাকার পরও একশ্রেণীর ডিলাররা সারের কৃত্রিম সংকট তৈরী করেছে। এতে করে কৃষকরা চাহিদা মতো সার পাচ্ছে না। তাদের অভিযোগের সূত্র ধরেই এই অভিযান। আগামীতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।

 

Check Also

চিকিৎসা সেবা

১টাকায় মিলছে ‘স্বাস্থ্য সেবা’

নাটোরের সুবিধাবঞ্চিত ও অসহায় মানুষের জন্য অভিনব উদ্যোগ হিসেবে ‘১ টাকায় স্বাস্থ্যসেবা’ কর্মসূচির আয়োজন করেছে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *