
নাজমুল হাসান, বিশেষ প্রতিবেদক:
আধিপত্য বিস্তার, মাদকের আগ্রাসন, ছিনতাই, পারিবারিক বিরোধ সহ নানা কারণে নাটোরে হত্যাকান্ডের ঘটনা দিনদিন বেড়েই চলছে। চলতি বছরে জেলায় ২৫টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে শুধু জুন মাসেই সাতটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া সম্প্রতি তিনদিনের ব্যবধানে চারটি খুনের ঘটনায় চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় রয়েছে নাটোরবাসি। হত্যাকান্ড রোধে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর উপর তাগিদ দিচ্ছেন সচেতনমহল ।
জানা যায়, নাটোরের ৭টি উপজেলায় প্রায় প্রতি মাসেই নানা কারণে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। আর বেশীর ভাগ হত্যাকান্ডগুলো সংগঠিত হয় প্রকাশ্যেই। ছিনতাই, আধিপত্য বিস্তার, মাদকের আগ্রাসন সহ পারিবারিক বিরোধে প্রাণ হারাচ্ছে নারী, শিশুসহ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।
চলতি মাসে সাতটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে তিনদিনের ব্যবধানে চার খুনের ঘটনায় চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছে নাটোরবাসী।
গত ১২ জুন লালপুরে আলোক বাগচি নামের একজনকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এরপর ১৩ জুন গুরুদাসপুরে হত্যা মামলার প্রধান আসামী জালাল উদ্দিনকে কুপিয়ে এবং হাত-পা কেটে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। আর ১৪ জুন নলডাঙ্গায় আমেনা খাতুন নামে স্বামী পরিত্যাক্ত এক নারীকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় এবং একই দিনে সিংড়ায় ১২ বছর বয়সী হেদায়েত আলীকে কুপিয়ে হত্যা করে তার সৎ ভাই। এছাড়া চলতি বছরের ছয় মাসে ২৫টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। আর বেশীরভাগ হত্যার ঘটনা ঘটে প্রকাশ্যে। একের পর এক হত্যার ঘটনায় চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে জনমনে। তবে গুরুদাসপুরে জালাল হত্যাকান্ডে মুল আসামী গ্রেফতার ছাড়া বাকি মামলা কোন অগ্রগতি নেই।
জেলা পুলিশের তথ্য বলছে, ২০১৬ সালে ১৮টি হত্যাকান্ড সংগঠিত হয় এই জেলায়। আর ২০১৭ সালে এই জেলায় একই ঘটনায় মামলা হয়েছে ৪২টি। ২০১৮ সালে হত্যার সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ তে। সার্বিক পরিসংখ্যানে নাটোরে দিনদিন হত্যাকান্ডের পরিমান বেড়েই চলছে। যেভাবে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটছে তাতে জনমনে চরম উদ্বেগের সৃষ্টি হচ্ছে।
নাটোরের দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক জানান, আমরা খুব চিন্তায় আছি যে, কখন আমরা হত্যাকান্ডের কথা শুনবো বা নিজেরাই আক্রান্ত হবো। এ ক্ষেত্রে আমরা মনে করি যে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবনতি তা এখনই রোধ করা দরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনির তৎপরতা বাড়ানো দরকার। সেই সাথে সামাজিক যে অবক্ষয় সৃষ্টি হয়েছে তা সবাইকে সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করা প্রয়োজন।
নাটোর জজকোর্টের আইনজীবী এ্যাডভোকেট রত্না আহমেদ জানান, একের পর এক যেভাবে খুন খারাপি বেড়েই চলছে। তাতে খুবই শংকায় আছি। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলছি আপনারা এই খুনিদেরকে খুঁজে বের করুন। আইনের আওতায় নিয়ে আসলে আপরাধিরা আর অপরাধ করতে সাহস পাবেনা।
সমাজকর্মী শামীমা লাইজু নীলা বলেন, সম্প্রতি নাটোবে তিনদিনের ব্যবধানে চারটি খুন হয়েছে। আর শুধু জুন মাসেই সাতটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এই খুনের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে উলেযোগ্য কোন অগ্রগতি নেই। আসামীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে অপরাধপ্রবনতা অনেকাংশে কমে যাবে।
নাটোর লাঠিবাঁশি কমিটির প্রতিষ্ঠাতা আব্দুস সালাম জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকরি পদক্ষেপ ও সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহন করলে হত্যাকান্ডের পরিমান অনেকাংশে কমে আসবে।
খুনের মামলাগুলোর অগ্রগতি ভাল উল্লেখ করে নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুলাহ আল মামুন বলেন, নাটোরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বেশ চমৎকার। আর যে দুইটা তিনটা খুনের কথা বলা হচ্ছে তা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর আছে।
পুলিশ সুপার বলেন, খুনের মাত্রা যেটা বলা হচ্ছে তা গতবছরের প্রথম ছয় মাসে যতোগুলো খুন হয়েছে, এ বছরের প্রথম ছয়মাসেও ততোগুলো খুন হয়েছে। এটা নিয়ে কোন ভাবেই বলা যাবেনা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও ভাল রাখতে পুলিশ জোর তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।
