নাটোরে জেলা নির্বাচন অফিসের সামনে থেকে সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণের পর মারধরের ঘটনা ঘটেছে। দেলোয়ার হোসেনকে গুরুতর আহত অবস্থায় নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করেন।
অপহরণ ও মারধরের ঘটনায় একমাত্র প্রতিপক্ষ চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হাবীব রুবেল ও তার সমর্থকদের দায়ী করছেন দেলোয়ার হোসেনের পরিবার।
লুৎফুল হাবীব রুবেল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান। রুবেল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলকের শ্যালক।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন লুৎফুল হাবীব। গতকাল রোববার পর্যন্ত তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। আজ সোমবার সকালে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে শহরের ষ্টেশন বাজারে আসেন দেলোয়ার। দেলোয়ার সঙ্গে দেখা করতে আসলে পথে তাঁর বড় ভাই ও কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক এবং আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন মুন্সিকে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেয় রুবেলের লোকজন।
অনলাইনে আবেদনের পর সেখান থেকে ফিরে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে মনোনয়নপত্রের প্রতিলিপি জমা দিতে আসেন দেলোয়ার হোসেন। সেখানে আগে থেকে ওত পেতে থাকা রুবেলের লোকজন তাকে মারধর করে কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গিয়ে বেধরক মারপিট করে বাড়িতে পৌঁছে দেয়। সেখান থেকে পরিবারের লোকজন নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করেন।
দেলোয়ার হোসেনের বড় ভাই এমদাদুল হক বলেন, নির্বাচন অফিসের সামনে থেকে আমার ভাইকে তুলে নিয়ে যায় লুৎফুল হাবীব রুবেলের সন্ত্রাসী বাহিনী মোহন ও তার লোকজন। সেখান থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ব্যাপক মারধর করে আমাদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে যায়। অবস্থা খারাপ দেখে নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই । সেখানকার চিকিৎসকরা রাজশাহী মেডিকেলে রেফার্ড করে। আমি অ্যাম্বুলেন্সে আছি কথা বলতে পারছি না। আমরা আমার ভাইয়ের ওপর হামলার বিচার চাই।
আপনাকেও অপহরণ করা হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে এখন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী গনমাধ্যম কর্মী এস এম কামাল হোসেন বলেন, আমি কোর্ট থেকে নেমে ডিসি অফিসের সামনে আসতেই দেলোয়ার হোসেনকে অপরিচিত বেশ কয়েকজন একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে চলে যায়।
নাটোর সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ড. রওশন আরা বলেন, রোগীর মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। এজন্য তাকে রাজশাহীতে পাঠানো হয়েছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে লুৎফুল হাবীব রুবেল বলেন, বিষয়টি আমার জানি ছিল না। একটি গণমাধ্যমের সংবাদ হয়েছে দেখলাম। এছাড়া হামলার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি করা হামলাকারী মোহন আপনার লোক কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মোহন আমার লোক না।’
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার আব্দুল লতিফ শেখ বলেন, সবকিছু অনলাইনে করা হয়েছে। দেলোয়ার হোসেনের আবেদন আগেই এসেছে।কোনো প্রার্থীকেই নির্বাচন অফিসে আসতে হয়নি। তবুও সন্ধ্যার আগে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। বিস্তারিত জেনে জানাতে পারবো।
পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি জানার পরে তাৎক্ষণিক পুলিশ ভিকটিমকে সিংড়া থেকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখান থেকে তাকে রাজশাহীতে পাঠানো হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ এনালাইসিস করে অপরাধী সনাক্তে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। দ্রুতই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।#