পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের অনিয়ম-দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক যে কমিটি করেছে, সে কমিটির কার্যক্রমের অগ্রগতি প্রতিবেদন চেয়েছেন হাইকোর্ট। ২ মাসের মাসের মধ্যে কমিটিকে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের শুনানির পর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সারওয়ার হোসেন ও মনোজ কুমার ভৌমিক। বেনজীর আহমেদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক ও মো. সাঈদ আহমেদ রাজা। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
শুনানিতে আদালত বলেছেন, ‘ভারতের মতো আমাদের দেশেও সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সম্পদবিবরণী আইন করা উচিত। আইন থাকলে কাউকে তাদের (সরকারি চারবিজীবীদের) সম্পদের পাহারা দিতে হতো না। ভারতে সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় এবং চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার সময় সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের বিবরণী দিতে হয়। বিবরণীতে সম্পদের ১০ শতাংশের বেশি পার্থক্য হলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে এরকম আইন করতে হবে। শুধু বাতাস খেয়ে চললে হবে না।’
২২ এপ্রিল দুদক একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু আমরা দেখেছি, দুদক ১০ হাজার অভিযোগ অনুসন্ধান না করে অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিদের দায়মুক্তি দিয়েছে। যে কারণে দুদকের অনুসন্ধানে আমরা বিচারিক তদারকি (জুডিশিয়াল সুপারভিশন) চাচ্ছি। এরপর বেনজীর আহমেদের পক্ষে শুনানি করতে দাঁড়ান আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক ও সাঈদ আহমেদ রাজা।
শুনানিতে এ দুই আইনজীবী বলেন, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকে এসব প্রতিবেদন করা হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রত্যেকটা পয়েন্ট ধরে ধরে জবাব দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া রিটে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। কিন্তু দুদক ইতোমধ্যে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে। ফলে এখন দুদক নিষ্ক্রিয় এটা বলার সুযোগ নেই। অভিযোগ অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে।
ফলে বিষয়টিতে আদালতে তদারকি বা হস্তক্ষেপ করলে স্বাধীন অনুসন্ধান হবে না। এতে কমিশন চাপ অনুভব করতে পারে। ফলে অন্তর্বর্তী আদেশ দেওয়া ঠিক হবে না।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান অনুসন্ধান কমিটি গঠনের আদেশ উপস্থাপন করে বলেন, সাবেক পুলিশ প্রধানের বিরুদ্ধে এটি গুরুতর অভিযোগ। দুদক ইতোমধ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছে।
এরপর আদালত সব পক্ষের যুক্তি শুনে আদেশে বলেন, যেহেতু দুদক ইতোমধ্যে অভিযোগ অনুসন্ধানে কমিটি গঠন করেছে। ফলে এই রিটে রুল জারি কিংবা অন্তর্বর্তী আদেশ দেওয়ার আর প্রয়োজনীয়তা নেই। যাই হোক, অনুসন্ধান কমিটিকে আগামী ২ মাসের মধ্যে অভিযোগের বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হলো।