নাটোরে সিংড়ায় উপজেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভার মঞ্চে দেখা গিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শালিকা ও ২০২০ সালে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত যুব মহিলা লীগ কর্মী ডা. ফারজানা রহমান দৃষ্টিকে। আওয়ামীলীগের সময় সুবিধা নেওয়া ফারজানা বিএনপির জনসভায় থাকায় নেতাকর্মীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এবিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেকে পোস্ট করছেন।
জানা যায়; ফারজানা রহমান দৃষ্টির চাচা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আনোয়ারুল ইসলাম আনুর জোরেই সভামঞ্চে উঠেন তিনি। পরে নেতা কর্মীদের মধ্যে কানাঘোষা শুরু হলে মঞ্চ থেকে চলে যান তিনি।
শুক্রবার(৬ ডিসেম্বর) বিকেলে সিংড়া কোর্ট মাঠে উপজেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ডা. ফারজানা রহমান দৃষ্টিকে দেখা যায়। এনিয়ে তোলপাড় চলছে সিংড়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট এম. রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ডা. ফারজানা রহমান দৃষ্টি সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের চাচা শশুর প্রভাষক আনিছুর রহমান মেয়ে। একই সাথে সিংড়া উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনু’র ভাতিজি।
জানা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ডা. ফারজানা রহমান দৃষ্টি তার দুলাভাই সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের প্রভাব খাটিয়ে চলতেন। তাছাড়া পলকের পক্ষে ভোটের মাঠেও নামেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে’ পলকের শালিকা হওয়ার সুবাদে ২০২০ সালে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন ডা. ফারজানা। তিনি উপজেলা যুব মহিলা লীগের কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতেন।
এবিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সিংড়া পৌর বিএনপির সদস্য সচিব তায়েজুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা এমন একজন মহিলা মঞ্চে ওঠার সুযোগ পায় কিভাবে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। ফারজানা রহমান দৃষ্টি সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলকের প্রভাব দেখিয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স দখল করে এখনো সেখানে একটি ক্লিনিক দিয়ে রেখেছেন। আর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন আনু তাকে আজকে মঞ্চে ওঠার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই এবং দলীয় হাই কমান্ডকে আহ্বান জানাই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। আত্মীয়করণ করে দলের ক্ষতি আমরা মেনে নেব না।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ডা. ফারজানা রহমান দৃষ্টি বলেন, আমি বিভিন্ন সোশ্যাল ওয়ার্ক এর সঙ্গে জড়িত এটা সবাই জানে। আমার কোন আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদেও নেই সুতরাং অন্যান্য পদে থাকার প্রশ্নই উঠে না এবং বিএনপির ও কোনো পদে নেই। আজকে যে আমি সমাবেশে গিয়েছি সেটাও কোন রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে যায়নি। আমি যেহেতু সামাজিক কাজ করি সেহেতু একটি পক্ষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে হেয় করতেই আমাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সিংড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, তাকে (ভাতিজি ডা. ফারজানা রহমান দৃষ্টিকে) আমি মঞ্চে উঠাইনি। অনেক মানুষ জনসভায় এসেছে কিভাবে উঠেছে জানিনা। আর সে যে যুব মহিলা লীগের কোন পদে রয়েছে এ বিষয়টিও আমি জানতাম না।
এবিষয়ে জানতে চাইলে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এম. রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, মিটিংয়ে হাজার হাজার লোক এসেছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে তো কাউকে চিনি না। আমাদের কানে যখন বিষয়টি এসেছে তাকে সড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
এবিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগ) অ্যাডভোকেট শাহীন শওকত বলেন, আসলে মিটিংটি সাংগঠনিক মিটিং নাকি পাবলিক মিটিং ছিল, আমি তা জানি না। তবে যদি তিনি ( দৃষ্টি) আওয়ামী লীগের কোন পোস্টে থেকে থাকে বা তার যদি অপকর্ম থাকে আমরা যদি বিষয়টি জানতে পারিনি এবং তদন্ত করে যদি প্রমাণ মেলে অবশ্যই তাদের (মঞ্চে যারা উঠিয়েছেন) বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।