দেশের সব শেষ অঞ্চল হিসেবে পাক বাহিনী মুক্ত হয় ‘নাটোর’

আজ নাটোর মুক্ত দিবস। স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষে বিজয়ের পাঁচ দিন পর অবরুদ্ধ নাটোরে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

আনন্দ অনুভব চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে নাটোরবাসীকে রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করতে হয় ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২১ ডিসেম্বর ১৯৭১ উত্তরা গণভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে হানাদার বাহিনী। বিজয়ের উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে।

২৬ মার্চের কালো রাতে ঢাকায় অপারেশন সার্চ লাইটে অসংখ্য বাঙালি হত্যার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। যোগাযোগ সুবিধার কারণে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নাটোরে তাদের দ্বিতীয় হেডকোয়াটার প্রতিষ্ঠা করে।

সমগ্র উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের যুদ্ধ নাটোর থেকে পরিচালনা করা হতো। শহরের ফুলবাগানে সিও অফিসে স্থাপিত হয় প্রধান কার্যালয়। এছাড়া তৎকালীন গভর্নর হাউস তথা বর্তমান উত্তরা গণভবন, রাণী ভবানী রাজবাড়ী, আনসার ক্যাম্প, পিটিআই এবং নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা কলেজে পাকিস্তান সেনাবাহিনী অবস্থান নেয়।

শহরের বিভিন্ন প্রান্তে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী অবস্থান নেওয়ায় নাটোর শহর ১৩ এপ্রিলের পর থেকে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ইতোপূর্বে নাটোর টাউন পার্কে খন্দকার আবু আলীর নেতৃত্বে গঠিত সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ এবং নাটোর রিক্রিয়েশন ক্লাব থেকে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের কার্যক্রম স্থির হয়ে পড়ে। নাটোর শহরে সেনাবাহিনীর শক্ত অবস্থানের কারণে মুক্তিযোদ্ধারা নাটোর ছাড়তে শুরু করেন বলে জানান, মুক্তিযুদ্ধের এই অঞ্চলের অন্যতম সংগঠক এডভোকেট মাজেদুর রহমান চাঁদ। তিনি বলেন, নাটোরের মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

মুক্তিযোদ্ধা শেখ আলাউদ্দিন বলেন, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের পর মুক্তিযোদ্ধারা রণাঙ্গন থেকে নাটোরে ফিরে আসতে শুরু করেন। ১৩ এপ্রিল থেকে ১৫ ডিসেম্বর নাটোর শহর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ১৬ ডিসেম্বর থেকে তারা নিজেদের গুটিয়ে নেয়। ১৬ থেকে ২০ ডিসেম্বর উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের বিভিন্ন স্থান থেকে সেনাবাহিনী নাটোরে আসতে থাকে। নাটোরে আসে মিত্রবাহিনী।

এরপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ২১ ডিসেম্বর তৎকালীন গভর্নর হাউস তথা বর্তমান উত্তরা গণভবনে ১৪১জন অফিসার, ১১৮জন জি.ও.সি, পাঁচ হাজার ৪৫০জন সিপাহী এবং এক হাজার ৮৫৬ জন প্যারামিলিশিয়া বাহিনী নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নওয়াব আহমেদ আশরাফ আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণ দলিলে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন মিত্র বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রঘুবীর সিং পান্নু। এ সময় অন্যান্যে মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মিত্র বাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল লসমন সিং এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অধিনায়ক মেজর জেনারেল নজর শাহ্। ১০ হাজার ৭৭৩টি অস্ত্রসহ জমা হয় ট্যাংক, মর্টার এবং অসংখ্য সাঁজোয়া যান।

সকালের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে কোনো সিভিলিয়নের প্রবেশাধিকার ছিল না বলে জানান, এলাকার ওই সময়ের যুবক বর্তমানে ব্যবসায়ী সাদেক খামারু।

এদিকে’ নাটোর মুক্ত দিবস উপলক্ষে আজ বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের আয়োজনে বেলা ১১টায় শহরের মাদ্রাসা মোড় থেকে শোভাযাত্রা বের করা হবে।

Check Also

নাটোরে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ করেছে বৈষম্য বিরোধি ছাত্র আন্দোলন

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ উপ-হাই কমিশনে হামলার প্রতিবাদ এবং ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নাটোরে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *